মিরসরাই(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সাহেরখালী ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের অভাবে খোলা আকাশের নিচে পড়ালেখা করছিল। খোলা আকাশেও অবশেষে ঠাঁই হচ্ছে না তাদের। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় আসর গুটিয়ে পাঠক্রমের অনেক দূরে স্ব-স্ব আশ্রয়ে অবস্থান এখন ওইসব শিক্ষার্থীর।
একই এলাকার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কৃষ্ণ জলদাশ ছিল তাদের ‘বিনে পয়সার’ শিক্ষক।কয়েকদিন আগেও ওই আসরের মালতী, রিমা, ইমন, নয়ন জলদাশদের মুখে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘আমরা পড়তে চাই, লিখতে চাই, একটি স্কুল চাই’।
পাড়ার এপাশ থেকে ওপাশ দল বেঁধে আসা শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে আসরে বসত তাদের মিলনমেলা। তাদের প্রচন্ড অর্থাভাব রয়েছে। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের কমতি নেই। তারা পড়তে আগ্রহী হলেও আশপাশে কোনো বিদ্যালয় নেই। স্কুলবঞ্চিত খোলা আকাশের নিচে অক্ষর-জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার আশায় আসা ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে প্রতিদিনই একত্রিত হতো। কিন্তু বর্ষাকালের প্রাক্কালে আর খোলা আকাশ নিরাপদ নয় শিক্ষার আসরের।এক মাস আগে ওই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেপাড়ার বাবুল জলদাশের বাড়ির আঙ্গিনায় ৫-৭ বছর বয়সী ৫০-৫৫জন ছেলেমেয়ের আসর বসেছে।কোনো গান বা নাচের আসর নয়, তারা সারিবদ্ধ ও সুশৃঙ্খলভাবে বসে পড়েছে খোলা আকাশের নিচে। তারা পড়ছে। শুরু করছে অ, আ, ক, খ দিয়েই। গত বুধবার একই স্থানে গিয়ে দেখা যায় অন্যরকম দৃশ্যপট। কোনো শিক্ষার্থীকেই দেখা যায়নি আগের মত। বাবুল জলদাশের বাড়ির বলরাম জলদাশ জানায়,বৃষ্টিপাতের কারণে এখন আর পড়ার আসর হয় না।কোনো ঘর না থাকায় এখন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। এসব শিশুদের শিক্ষক ১৩ নম্বর মায়ানী ইউনিয়নের পশ্চিম মায়ানী সফিউল আলম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কৃষ্ণ জলদাশের সাথে কথা হয় বিদ্যালয়ে গিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘গত ২০-২৫ দিন আগে থেকে শিক্ষাদান বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টির কারণে পড়ালেখা হচ্ছে না। ঘর থাকলে কোনো রকমে চালানো যেত।’’কৃষ্ণ জলদাশ জানান, সাহেরখালী জেলেপাড়ায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। প্রায় প্রতিটি পরিবারে অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী। সাগর থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করলে তাদের খাবার জুটে, না হলে উপবাস কাটাতে হয় তাদের।
তবে পাড়ার কাছাকাছি একটি বিদ্যালয় থাকলে শিক্ষার প্রতি ছেলেমেয়েদের যেমন আগ্রহ বাড়ত তেমনই অভিভাবকদেরও সচেতনতা বৃদ্ধি পেত বলে দাবি করেন কৃষ্ণ জলদাশ।মিরসরাই উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নের জেলেপাড়াটিতে বাস করে শতাধিক পরিবার। এ পাড়ায় সাত বছরের নিচে এমন শিশু রয়েছে ১২০ জন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র হাতেগোনা ২০জনই যায় বিদ্যালয়ে।
জীবনধারণের জন্য বাবারা মাছ ধরার সন্ধানে দিনের পর রাত ছুটলেও সমত্মানদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে একটুও কৃপণতা নেই।কিন্তু বাধা কেবল একটি বিদ্যালয়। জেলেপাড়াটি থেকে দীর্ঘ তিন কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে আনন্দেরহাট আবদুল মজিদ (রেজি.) প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর দুই কিলোমিটার পূর্বে রয়েছে সাহেরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।এত দূরে গিয়ে পড়তে তাদের নানান অসুবিধে হয়। সময়ের হিসেবে আটকে যায় তাদের দূরবর্তী স্থানের বিদ্যালয়ের যাওয়ার পড়ালেখা।