মিরসরাই(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে অব্যাহত সন্ত্রাসী তৎপরতায় স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। বিশাল এ অঞ্চলজুড়ে সক্রিয় রয়েছে একাধিক জল ও বন দস্যুবাহিনী। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট, চাঁদাবাজির কারণে ওইসব এলাকার মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজন ভয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস করেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো অভিযান না থাকায় এবং উপকূলীয় এলাকায় বনবিভাগের পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় সন্ত্রাসীদের পদচারণা কেবলই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের একমাত্র উপার্জনস্থল বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র উপকূলে জলদস্যু বাহিনী এবং উপকূলীয় বনাঞ্চলে বনদস্যুদের তান্ডব প্রতিনিয়তই লেগে থাকে।
মিরসরাইয়ের সাতটি উপকূলীয় ইউনিয়নের মধ্যে ১৬ নম্বর সাহেরখালী, ১৪ নম্বর হাইতকান্দি, ১৩ নম্বর মায়ানী, ১১ নম্বর মঘাদিয়া, ৬ নম্বর ইছাখালী ও ৫ নম্বর ওসমানপুর ইউনিয়নের উপকূলবর্তী স্থানের প্রায় ২৯টি জেলেপাড়া রয়েছে। এসব জেলেপাড়ার প্রায় সাড়ে চার হাজার জেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জন স্থলে বারবার জলদস্যুতার ঘটনা ঘটে। দস্যুরা জেলেদের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন নৌকা লুট এবং জাল পুড়িয়ে দেয়। দস্যু আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পেতে জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন।প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। জেলেদের অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে জোরদার করা হয়েছে একাধিক বেসরকারি সংগঠনের কার্যক্রম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
জলদস্যু ছাড়াও এখানে বিচরণ রয়েছে বনদস্যু সিন্ডিকেট। তাদের কবলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পুরো ২০ হাজার একরে সৃজনকৃত উপকূলীয় বনায়ন। মূলত বেড়িবাঁধ নির্মাণের লক্ষেই এখানে বনায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু বনদস্যুবাহিনীর তান্ডবে দিনের পর দিন মরুতে রূপ নিতে শুরু করেছে ওই এলাকা। ওই এলাকায় অবস্থিত বন বিভাগের একমাত্র বিটে চার জন বনরক্ষী রয়েছে। বনদস্যুদের কবল থেকে সবুজ বনায়ন টিকিয়ে রাখতে তাদের বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা বিফলে যায় সন্ত্রাস বাহিনীর তান্ডবে। আর ন্যূনতম কর্মকর্তা দিয়ে এত বড় এলাকায় কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতিশীলতা রক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিশাল একটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাহেরখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু ছালেক (৩৫)। তার ইন্ধনেই সংঘটিত হয় সব ধরণের জলদস্যুতা। তার রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট, অস্ত্রের ভান্ডার। অথচ সার্বক্ষণিক লুঙ্গি পরে থাকা আবু ছালেককে দেখলে মনে হবে না সে সন্ত্রাসের গডফাদার। গত চার বছর ধরে একচেটিয়া আধিপত্য বিসত্মারের মাধ্যমে আবু ছালেক একে একে পুরো উপকূলীয় এলাকা সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গেলে ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নের পঞ্চাশোর্ধ এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের গহীনে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র মজুদ রয়েছে। যেকোন মূহুর্তে প্রশাসনিকভাবে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অস্ত্রভান্ডারের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত প্রশাসনের কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। এদিকে উপজেলার সাতটি উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে মৎস্যজীবীরা সরকারি খাস জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছে মৎস্য প্রকল্প। মাছ চাষের বিভিন্ন পয়েন্টের একেকটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিলেও সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কারণে লোকসান গুণতে গুণতে ক্রমেই মৎস্যচাষীরা ওই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। চাঁদা না দিলে সেখানে মাছ চাষ করতে পারছে না স্বাভাবিকভাবে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ উপকূলীয় অঞ্চলের সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে তিনি জানান, ওই বিষয়গুলো বনবিভাগ দেখার কথা।
মিরসরাই উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নের সন্ত্রাস কার্যক্রমের নেতৃত্বদাতা আবু ছালেক তার বিরুদ্ধে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, এলাকার কিছু মানুষের সঙ্গে তার মানসিক দূরত্ব থাকায় তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সন্ত্রাস কার্যক্রমের নেতৃত্বে কে আছে বা কারা সন্ত্রাস কার্যক্রমে জড়িত থাকতে পারে এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বারবার কৌশলে এড়িয়ে যান।