মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, পাবনা :
পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলের অধ্যুষিত উপজেলাগুলোতে গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণে এ অঞ্চলের খামারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। খামারীরা গবাদিপশুকে এখন ভাত খাওয়ানো শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলনবিলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, উলাপাড়া, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, বাঘাবাড়ি, তাড়াশ, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও রায়গঞ্জসহ আশে-পাশে উপজেলাগুলোতে গবাদি পশু পালনের প্রসুদ্ধি লাভ করেছে। দুগ্ধ এলাকা হিসেবে এ এলাকায় ব্যাপক পরিচিত রয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকেরা সারা বছরের গবাদী ও দুগ্ধ গাভী পালন করে শতশত খামারীরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে গো-খাদ্যে মূল্যে বৃদ্ধিতে খামারীর মালিকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
একাধিক খামারীরা বলছেন, এখন চালের চেয়ে ভুসি ও খৈলের দাম অনেক বেশি। তাই খরচ বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে গরুকে ভাত খাওয়াতে হচ্ছে। এছাড়া ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ না ওঠায় অনেকে তা বিক্রি না করে গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছেন বলে তারা জানান। তারা বলেন, এরকম গো-খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিতে হবে। চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক, খামার মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর প্রতি কেজি ভুসির মূল্য ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে প্রতি কেজি গম, ছোলা ও খেসারির ভুসি এবং খৈল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়।
তারা আরোও জানান, ভুসির দাম চালের চেয়ে বেশি হওয়ায় গরুকে ভাত খাওয়ানো হচ্ছে। এতে তাদের গরুর খাদ্যে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এসব গরু বাজার থেকে কিনে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পালন করে বিক্রি করা হয়। এতে তাদের খরচ বাদে গরুর প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ভুসি ও খৈলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া বাজারের বেশির ভাগ ভুসিতে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। তাই তারা এসব গো-খাদ্যের বদলে ভাত খাওয়াচ্ছেন।
চাটমোহরে জালেশ্বর গ্রামের খামার মালিক আব্দুল হামিদ বলেন, এবার ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ না ওঠায় তিনি ধান বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এই ধানের চাল ও চালের খুদ রান্না করে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। তিনি আরোও বলেন, গরু কেনার পর প্রথম দিকে ভাত ও ভুসি একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানোর মাঝে মধ্যে গরুর পেটে সমস্যা দেখা দিতো। কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
চাটমোহর বোয়ালিয়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, দেশে মানুষের খাদ্যের চেয়ে পশুর খাদ্যের দাম বেশি-এমন ঘটনা কোনো দিন দেখেননি। তিনি আরোও বলেন, সরকার এবার কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন কৃষক। এখন তাদের ধান বিক্রি করে গো-খাদ্য কিনতে হচ্ছে।
চাটমোহর মির্জাপুর বাজারের গো-খাদ্য বিক্রেতা মো. আব্দুর রহমান বলেন, গত বারের তুলনায় এ বছর গো-খাদ্যের দাম অনেকটা বেড়েছে। দাম বেশি হলে আমাদের করার কিছুই নাই। আমরা বেশি মূল্যে দিয়ে কিনে আনছি, তাই সিমিত লাভ রেখে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দাম করলে খামারীদের পক্ষে সুবিধা হবে।
এব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অফিসের জনৈক কর্মকর্তা বলেন, গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় কৃষক গরুকে ভাত খাওয়াচ্ছেন। ভাত পশুর দ্রুত হজম হয় এবং মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই তা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়াতে হবে। না হলে কোনো অসুবিধা হতে পারে।