আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজার থেকেঃ সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের ভূ-সম্পত্তি কৃষি বন্দোবসত্ম নিয়ে নির্মিত হচ্ছে বাসাবাড়ি ও দোকান কৌঠা। এভাবে ওই সেকশনের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে। রেল সেকশনের বিভিন্ন ষ্টেশন ও সংলগ্ন এলাকার হাজার হাজার কোটি টাকার মূল্যবান ভূ-সম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালীরা কৃষি বন্দোবসত্ম নিয়ে খন্ড খন্ড অংশ করে আবার বাসাবাড়ি বা দোকান কৌঠা করে অন্য লোকজনের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি ও ভাড়া দিয়েও প্রভাবশালীরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিগত ওয়ান-ইলেভেনের পর যৌথ বাহিনী বিভিন্ন ষ্টেশন সংলগ্ন স্থান থেকে কিছূ জমি উদ্ধার করলেও ধীরে ধীরে আবার বেদখল হয়ে গেছে। মূল্যবান এসব জমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেলেও ওই সম্পত্তি উদ্ধারে কর্তৃপÿÿর কোন তৎপরতা নেই। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রভাবশালী মহল কর্তৃক রেলওয়ের বন্দোবসত্ম নেওয়া জমিজমার সাথে পরিত্যক্ত জমি নিজেদের দখলে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছেন। এসব জমি কিনে লোকজন স্থায়ীভাবে বসতঘর নির্মাণ করছেন। এ ছাড়াও প্রভাবশালীরা টিনসেড, পাকা ও আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এসব ঘরে নিম্ম আয়ের লোকজন ভাড়া নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। রেলপথে পাশে এসব জমিতে গড়ে উঠা কলোনী সমূহে কেউ কেউ লোহা চুরি আবার কেউ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। প্রভাবশালীদের কেউ কেউ এসব জমি কৃষি লিজ নিয়ে দালান-কৌটা নির্মাণ করছেন। আবার অন্য লোকদের কাছে বিক্রিও করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ওই জোনের ভাটেরা, কুলাউড়া, লংলা, শমশেরনগর, ভানুগাছ, শ্রীমঙ্গল, সাতগাও, রশিদপুর, লস্করপুর, শায়েসত্মাগঞ্জ ও নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন ষ্টেশনের পাশের জমি অবৈধ দখলে নিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেকশনের কুলাউড়া উপজেলাধীন হাজীপুর ইউনিয়নের পাবই এলাকার জনৈক আব্দুর রহমান সম্প্রতি রেলওয়ে সংলগ্ন কৃষি জমি দখলে নিয়েছেন। ওই জমিতে মাটি ভরাট করে উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে প্রায় ৫শ’ ফুট পরিমাণ জমির উপর ছোট ছোট গৃহ নির্মাণ করে দোকান কোটা বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। ÿতাসীন দলের একটি মহল এবং রেলওয়ের এক কর্মচারীর প্রভাবে দখল কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে দখলদার আব্দুর রহমান বলেন, রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে ১৯৯৭ সালে ১ একর ৪৯ শতক কৃষিজমির বন্দোবসত্ম এনে এখানে ছোট ছোট কয়েকটি অস্থায়ী টং দোকান বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। স্থানীয় এলাকার হারুনুর রসিদ, আব্দুল আহাদ, আব্দুর রহিমসহ এলাকাবাসী জানান, অবৈধভাবে নির্মিত এসব দোকানের কারনে রেলক্রসিং-এ মারাত্বক দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হওয়ায় সরকারের সংশিস্নষ্ট বিভাগ বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে রেল লাইনের ক্লিপ, নাটবল্টুসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাওয়ায় এই সেকশনে রেল চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন। সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ওই জোনের বিভিন্ন ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে নির্মিত দালান। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাসের জন্য দালানগুলো অন্য পেশার লোকজনের কাছে চড়ামূল্যে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিভিন্ন ষ্টেশনে কর্মরত মাষ্টার ও প্রকৌশলী বিভাগের লোকজন ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে এভাবে টাকা উপার্জন করছেন। আবাসিক কোয়ার্টারে বাইরের লোকজন বসবাস করলেও সেখানে সরবরাহকৃত পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল ও পরিশোধ করতে হচ্ছে সংশিস্নষ্ট বিভাগকে। শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার মোঃ শাহজাহান বলেন, কৃষি বন্দোবসত্ম নিয়ে এভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাসাবাড়ি ও দোকান গৃহ গড়ে উঠছে। গণপূর্ত (রেল) (শ্রীমঙ্গল অঞ্চল)-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ এরফানুর রহমান বলেন, ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে লিজ নিয়ে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তবে বিষয়টি ভূসম্পত্তি বিভাগের হলেও মাঝে মধ্যে তাদের অভিযোগ পেয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ ব্যাপারে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।