আবদুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজার থেকেঃ
ভবনের দেয়াল ধসে পড়ছে। দেয়ালে দেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে ফাটলের। ভবনের খুঁটি ফেটে চৌচির। ছাদ ও দেয়ালের আস্তরণ ঝুরঝুর করে ঝরছে। দেয়ালের অংশ ধসে পড়ায় ও ফাটল দেখা দেওয়ায় একটি কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানসংকুলান না হওয়ায় ক্লাস চলছে সবুজ ঘাসের চত্বরে। আকাশে ঝড়ের আভাস দেখলেই বাজছে ছুটির ঘণ্টা।
এই হচ্ছে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ৭৯ নম্বর নওয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের বাস্তবতা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে লেখাপড়া করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের ভয়কাতর কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের সরল অনুরোধ, ‘শেখ হাসিনার কাছে ফন করইন (ফোন করেন) স্যার। আমরার স্কুলটা বানাই দিতা (তৈরি করে দিতে)। আর কেউরে কইয়া কিচ্ছু অইতো নায় (আর কাউকে কিছু বলে হবে না)।’ ৭৯ নম্বর নওয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও এলাকার অভিভাবকদের পক্ষ থেকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবন’ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একটি পত্র দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছিল, ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ছাদ ধসে পড়ছে। দেয়াল ফেটে গেছে। মেঝে দেবে গেছে। ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরপর আরও বিভিন্ন স্থানে পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু ৭৯ নম্বর নওয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ফরমুজ আলী বলেন, ‘কয়েকবার টিইও (উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা), চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছি। এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি।’ বিদ্যালয়ের করুণ অবস্থার বিবরণ দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি ও অভয়চরণ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সাধন কপালি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের অবস্থা দেখে অভিভাবকেরা স্কুলে ছাত্র পাঠাতে নারাজ। ঝড়-তুফান উঠলে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানকে নিতে ছুটে আসেন। আমরা শিক্ষকদের বলেছি বাইরে ক্লাস নিতে। ঝড় দেখলে ছুটি দিয়ে দিতে। দুর্ঘটনা ঘটলে কে দায়ী হবে!’ কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ বলেন, ‘ভবনটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। আমি বিষয়টি নিয়ে ইউএনও, উপজেলা প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি। টিইও সাহেবও নিজে ভবনটির অবস্থা দেখেছেন।’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, ‘ভবনের অবস্থা আমার নলেজে নেই।’