ডেস্ক রিপোর্ট:
রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অবশেষে পদত্যাগ করলেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। আজ সোমবার বেলা একটা ২০ মিনিটে রেলভবনে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। সুরঞ্জিত বলেন, ‘রেল মন্ত্রণালয়ের সফলতা যেমন আমার ওপর বর্তায়, তেমনি ব্যর্থতাও আমার ওপরই বর্তায়। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার পরও এই ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব নিয়ে আমি রেলমন্ত্রী হিসেবে রেলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিতের বক্তব্য:
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙে আলাদা মন্ত্রনালয় করে আমাকে দায়িত্ব দেন। আমি সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করেছি রেলকে গতিশীল করার, নিয়মানুবর্তিতা ঠিক রাখার, কালোবাজারে টিকিট বন্ধ করার এবং রেলকে পরিচ্ছন্ন করার।’ অল্প সময়ে রেলের উন্নয়নে নেওয়া নানা পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন, রেলে নতুন বগি, নতুন লাইন ও নতুন ইঞ্জিন এনে রেলকে আরও প্রসারিত করা হয়েছে। ১০০ বছরের ইতিহাসে এই সরকারই প্রথম হাজার হাজার অর্থ দিয়ে এই রেলকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চক্রান্ত চলছে। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষায় দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র এসেছে। সেই গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে পদত্যাগ করছি।’ তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের যে দাবি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, বিরোধী দলসহ সবাই করছেন, সেই তদন্তের বিষয়টি শঙ্কামুক্ত করতেই আমি পদত্যাগ করলাম। নিজের বিবেক, রাজনৈতিক চেতনা, অতীতের সব রাজনীতির ধারাবাহিকতা এবং স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্যের কারণে আমাকে অনেক সুহূদ সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ীরা এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে সুষ্ঠু তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমি সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পদত্যাগ করছি।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভাষ্য, ‘আমি খুব দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ওই ঘটনার সঙ্গে আমার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তার পরও আমি আজকে গণতন্ত্রকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করার জন্য একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ৯ এপ্রিল তাঁর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে (জিএম) বহনকারী গাড়িতে অর্থ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে একটি বিতর্কিত অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা নিয়ে তিনি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন মন্তব্য করে বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো যোগসূত্র নেই। তার পরও আজ একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঘটনা তদন্তে প্রাথমিকভাবে দুটি কমিটি করা হয়েছে।’ অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নইলে তাঁরা আদালতে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা তদন্তকাজে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবারও রাজনীতির অঙ্গনে তিনি নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।