অসীম মোদক,মহেশপুরঃ
পায়ে শিকল,সঙ্গে দুটি তালা,ভাঙাচোরা ঘরের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পশুর মতো বাঁধা, এভাবেই জীবনের এক দশক কেটে গেছে মানসিক প্রতিবন্ধী মুকুল হোসেনের (৩৫)। এক দশক ধরে শিকলে বন্দি জীবন কাটলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না তার। বৃদ্ধা মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাবার জোটান। মুকুল প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পেলেও মাঝে মাঝে ঔষধ কিনতেই তা ফুরিয়ে যায়। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের টাকার অভাবে করানো যাচ্ছেনা উন্নত চিকিৎসা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌর এলাকার বগা গ্রামের মৃত রিজাউল ইসলামের বড় ছেলে মুকুল হোসেন। তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লুই পাড়া-মহল্লা মাতিয়ে রাখতো। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শান্তশিষ্ট ছেলে হিসেবে গ্রামের সবাই তাকে আদর করতো। কিন্তু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। ২০/২২ বছর ধরে মানসিক সমস্যা দেখা দিলেও পায়ে শিকল পড়েছে ১০ বছর ধরে।
সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের এক ভাঙাচোরা ঝোপড়া ঘরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মুকুলকে। বাঁেশর খুঁটিতে শিকলে বাধা তালায় ধরেছে জং,মরিচা পড়েছে শিকলে। রোদ বৃষ্টি কিম্বা ঝড়ের দিনে এখানেই বসবাস তার। কারো উপস্তিতি টের পেলে ভাঙ্গা জানালা-দরজা দিয়ে উকি ঝুকি মারতে থাকেন শিকলে বাধা মুকুল। কাছে কেউ গেলেই বলতে শুরু করেন মামু আমার মাকে দেখে রেখো,মা যেন হারিয়ে না যায় আরো কতো কি।
টিনের ছাপড়ার সঙ্গেই লাগানো আরেকটি ঘরে মুকুলের মা ফিরোজা বেগম ছোট ভাইয়ের পরিবারের সাথে বসবাস করেন। এই ঘরটিও জরাজীর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৪ ভাই বোনের মধ্যে মুকুল সবার বড়। ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় সে আজ মানসিক ভারসাম্যহী। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, ভাই দিনমজুর। অভাবের সংসার। পরিবার নিয়ে তাদেরই জীবন চলে কষ্টে। তাইতো মুকুলের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তার বৃদ্ধা মা ফিরোজা বেগম অন্যের বাড়িতে ও ক্ষেত খামারে কাজ করে কোনোমতে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেন।
মা ফিরোজ বেগম জানান,আমার ছেলেটা অনেক ভালো ছিলো। গ্রামের সবাই তাকে ভালো জানতো। আমার কপাল পোড়া আর্থিক সমস্যার কারনে ১৩/১৪ বছর বয়সে ছেলের একশিরা রোগের আধুনিক চিকিৎসা না করাতে পেরে কবীরাজী চিকিৎসায় ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে ছেলের আজ এই অবস্থা। পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখতে হচ্ছে তাকে। লোকের ফসল,গাছেন ফল পেড়ে নষ্ট করে ফেলতো। অনেক সময় মানুষজনও তাকে ধরে মারপিট করতো। শিকল না পড়িয়ে রাখলে কোথায় যে চলে যায় খুজে পাওয়া যায় না। এ কারণে বাধ্য হয়েই পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন এর আগে অনেক জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়েছিলো। কিন্তু টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, অতি দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে মুকুলের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো সে কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় তাহলে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনিসুল রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে ছেলেটি শিকলে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে,এটা খুবই দুঃখজনক। আমি খোজঁ-খবর নিয়ে দেখছি তার জন্য কি ব্যবস্থা করা যায়।