ডেস্ক রিপোর্টঃ
গত এক বছরে (২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে) সারাদেশে অন্তত ১ হাজার ৩২১ জন নারী ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর সে হিসেবে বাংলাদেশে গড়ে প্রতি সাড়ে ছয় ঘণ্টা পরপর একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২১ : আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ তথ্য প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১ হাজার ৩২১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন। আর গত বছর (২০২০ সালে) ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ১ হাজার ৬২৭ জন নারী এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪১৩ জন নারী। একইসঙ্গে দেশে গত এক বছরে ধর্ষণ, বন্দুকযুদ্ধ, রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের উপর হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় ৮০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এসব ঘটনায় চলতি বছরকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরমতম বছর বলে মনে করছে সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. নূর খান। বক্তব্যে তিনি বিভিন্ন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ঠান্ডা মাথার খুন বলে অভিহিত করেন। এ জন্য গত ১০-১২ বছরের বিভিন্ন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি আলাদা কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব করেন তিনি। নূর খান বলেন, গত কয়েক বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতির সঙ্গে এ বছরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পারি, মানুষের যতটুকু সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে তা পার হয়ে গেছে। এদিক থেকে চলতি বছর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরমতম বছর।
তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যায়, সে বছর গুমের ঘটনা কমে যায়। আবার যে বছর গুমের ঘটনা বেড়ে যায়, সে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে। এ থেকে বোঝা যায়, এসব ঘটনা কমে না বরং একটার সঙ্গে অন্যটা সম্পর্ক রয়েছে। মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য সুতার মাধ্যমে এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে “আমেরিকায় বাংলাদেশের চেয়েও বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়” এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সংগঠনটির মহাসচিব বলেন, আসলে এসব কথা বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা নিজেদের দোষ কাটানোর চেষ্টা করেন। সব সরকারের সময় দেখা যায় তাদের বক্তব্য দাড়ি কমাসহ প্রায় একই ধরনের। অথচ আমরা দেখেছি আমেরিকাতেই যে কৃষ্ণাঙ্গকে পুলিশ হত্যা করেছে, তার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমা চেয়েছে, এই ঘটনায় দায়ী পুলিশের বিচার হয়েছে, রাষ্ট্র ভুক্তভোগীর পাশে থাকে। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখলাম এ দেশে কমিশনার একরাম হত্যাকাণ্ডে তার মোবাইলটা অন ছিল, তার মেয়ে বলছে বাবা তুমি কাঁদছো কেন, তারপর দুইটা গুলি। এ ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোনো মামলা নেয়নি পুলিশ। গতকাল আমি একরামের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছে, দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়িয়েছে। আদালতে যাওয়ার মতো অবস্থা তাদের পরিবারের নেই। প্রায় সবগুলো ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঠান্ডা মাথায় খুন।
সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ও সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আসক নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আসকের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল ও পরিচালক নীনা গোস্বামী। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২১ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৮০ জনের মধ্যে ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন ৮ জন। এছাড়াও কারাগারগুলোতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন আরও ৮১ জন। এর মধ্যে ২৮ মে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে মিলন বিকাশ ত্রিপুরা নামে একজন মারা যান, তার গলায় গামছা পেঁচানো এবং মাথায় আঘাত পাওয়া গেছে।