করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে আছে গোটা বিশ্ব, যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষাঙ্গনেও। প্রায় দেড়বছর ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। উন্নত বিশ্বে অনলাইন পাঠ কার্যক্রমের বিষয়টি বেশ প্রচলিত হলেও অবকাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তা বেশ কঠিন। তবুও শিক্ষার্থীদের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে পাঠদান পরিচালনা করেছে। সার্বিক বিষয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা, প্রত্যাশা ও পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে মতামত জানতে একটি বিশেষ জরিপ চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ।
গত ৩০ মে অনলাইনে গুগল ফর্মের মাধ্যমে এই জরিপ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের ‘সোশ্যাল সায়েন্স টিম’, যা চলে ১৫ জুন পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইন্সটিটিউট ও বিভাগের ৩৭৩০ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। রোববার (১৮ জুলাই) গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
জরিপে জানা যায়, করোনাকালে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ৪৪.৫ শতাংশ গ্রামে, ১৫.৭ শতাংশ ছোট শহরে, ১৯.৩ শতাংশ শহরে এবং ২০.৩ শতাংশ মহানগর এলাকায় অবস্থান করছে। এ পর্যন্ত চলমান অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ৪৬ শতাংশ ‘সন্তুষ্ট নন’ বলে জানিয়েছেন। মাত্র ২.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এতে ‘সন্তুষ্ট’। আর নেটওয়ার্কের সমস্যা, ডিভাইসের অপর্যাপ্ততা, প্রতিকূল পরিবেশসহ নানা কারণে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ জানিয়েছে, এই জরিপে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ১০৩৬, কলা অনুষদের ৯৬৯, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৬৭৯, ইন্সটিটিউটসমূহের ৩৯৯, জীববিজ্ঞান অনুষদের ২৩৯, বিজ্ঞান অনুষদের ১৫৭, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৭৯, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের ৭৩, আইন অনুষদের ৬২, ফার্মাসি অনুষদের ২৭ ও চারুকলা অনুষদের ১০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এদের মধ্যে ৮৫.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইলফোনের মাধ্যমে এবং ৬৪.১ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ডাটার সাহায্যে ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছেন।
ইতোপূর্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত মিড-টার্ম বা সমমান পরীক্ষায় বিভাগ বা ইন্সটিটিউট থেকে ৬২.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছিলেন। ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক এবং তাদের মধ্যে ৮৭ ভাগ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন। এ ছাড়া ওপেন বুক, এমসিকিউ, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর দেওয়ার পক্ষেও মতামত পাওয়া গেছে জরিপে।
অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সিলেবাস শেষ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৫৩.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘না’ উত্তর দিয়েছেন।
অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে যারা ইচ্ছুক নন তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন— গ্রামের বাড়িতে ভালো নেটওয়ার্ক সংযোগ না থাকা, বিদ্যুতের সমস্যা, বাড়িতে পরীক্ষা দেয়ার বা প্রস্তুতি নেয়ার পরিবেশ না থাকা, প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা, ডিভাইস বা ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার সামর্থ না থাকা, পরীক্ষার মূল্যায়নপদ্ধতি নিয়ে দ্বিধা, অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা না থাকা এবং প্রস্তুতি না থাকা। ৫২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বশরীরে পরীক্ষার হলে বসতে আগ্রহী এবং ১৭.১ শতাংশ শিক্ষার্থী অটো প্রমোশনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
জরিপ থেকে আরও জানা যায়, বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে ডিভাইস বা আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করে সহায়তা পেয়েছেন মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। ২৬ শতাংশের কিছু বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেও এখনো সহায়তা পাননি। বাকি শিক্ষার্থীরা নিজ থেকেই আবেদন করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল করিম এ জরিপ মূল্যায়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন তাওহিদা জাহান জরিপ কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ন করেন। এটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংসদের সোশ্যাল সায়েন্স টিমের টিম ম্যানেজার মো. তানবীরুল ইসলাম, কো-অর্ডিনেটর সুমাইয়া ইমতিয়াজ, মো. আতিকুজ্জামান, জাওয়াদ সামস, রাগীব আনজুম, মো. ওমর ফারুক ও সুমাইয়া আহমেদ। জরিপটি বিশ্নেষণ ও পুনর্বিন্যাসে সহযোগিতা করেছেন সংগঠনের সভাপতি নাসরিন জেবিন, সাবেক সভাপতি সাইফুল্লাহ সাদেক, শাহরিন ফারাহ খান ও ইসতিয়াক উদ্দিন।