ডেস্ক রিপোর্ট :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতিকৃতিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রবিবার সকালে ধানমণ্ডি ৩২ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আবারও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী চলে গেলে সকলের জন্য জায়গাটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর অওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আজীবন সংগ্রামী। তার যখন জন্ম হয় তখন ছিল বৃটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান পেরিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। একাত্তরের মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নজীরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ই মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’র নামে নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তার প্রথম বিচার শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অসংখ্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকালে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭টায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে যাবেন টুঙ্গিপাড়ায়। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার মাজারে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী সেখানে আয়োজিত শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন, পুরস্কার বিতরণ এবং বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। সেখানকার অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, বঙ্গবন্ধুকে লেখা শ্রেষ্ঠ চিঠি পাঠ, সেলাই মেশিন বিতরণ, ‘আমার কথা শোন’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন ইত্যাদি। এছাড়া আগামীকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।