এম. বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরাঃ বর্তমানে দেশে দূর্ঘটনা একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফ্লাইওভার ধস, ঢাকার আশুলিয়া ও দক্ষীণখান গার্মেন্টসে আগুন তার জ্বলজ্যামত্ম প্রমাণ। সাতÿীরায় তেমন উল্লেখ যোগ্য কোন দূঘটনা না ঘটলেও গত ৮ বছরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৫৮৭ টি, যাতে ৫ কোটি ৩২ লক্ষ ১৯ হাজার ৩শ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক উদ্ধার করা হয়েছে ৩২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮শ টাকার সম্পদ। যা ফায়ার সার্ভিসের কাজের যথাযথ আমত্মরিকতার প্রকাশ পায়। তবে সাতক্ষীরা জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় নানা সমস্যায় জর্জরিত এ সংস্থাটি। যা এ সংস্থার সফলতার অমত্মরায়।
জানাযায়, সাতক্ষীরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ১৯৭৩ সালে ১ একর ৪ শতক জমি উপর ২৬ জন কর্মি নিয়ে স্থাপিত হয়। বর্তমানে সাতক্ষীরা স্টেশনে ১টি পানিবাহী গাড়ী, ১টি দুই কলবাহী গাড়ী রয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায় রোগী বহন জন্য রয়েছে ১টি এ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু ২য় শ্রেনীর স্টেশন হওয়া এখানে গাড়ীর সংখ্যা এবং জনবল খুবই সীমিত। জেলার সদর, তালা, কলারোয় উপজেলা সহ প্রয়োজন বোধে সমগ্র উপজেলায় অগ্নিকান্ড বন্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। স্টেশনটিকে ২য় শ্রেণী থেকে ১ম শ্রেনীতে উন্নিত করা এবং একটি ৩ কল বাহী গাড়ী জেলার অগ্নিকান্ড নিয়োন্ত্রে খুরই জরুরী বলে মনে করেন সাতক্ষীরা বাসি।
এবং কালিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ২০০৭ সালে ৩ ডিসেম্বর ৮০ শতক জমি উপর ১৬ জন কর্মি নিয়ে স্থাপিত হয়। স্থাপনের সময় নতুন ১টি এক কল গাড়ী এবং ১ টি দুই কল গাড়ী দেওয়া হয় কিন্তু ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর খোড়া যুক্তি দেখিয়ে আক©র্শক ভাবে গাড়ী তুলে নিয়ে ডুমুরিয়া স্টেশনে স্থামত্মর করা হয়। বর্তমানে কালিগঞ্জ স্টেশনে পুরাতন ১টি পানিবাহী গাড়ী, ১টি দুই কলবাহী গাড়ী রয়েছে। তবে স্টেশনটি তৃতীয় শ্রেনীর স্টেশন হওয়ায় এখানে কোন প্রকার গাড়ী চালকরে পোষ্ট নেই। বর্তমানে এই স্টেশননি জেলার কালিগঞ্জ, দেবহাটা, আশাশুনি এবং শ্যামনগর উপজেলায় অগ্নিকান্ড বন্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
সাতক্ষীরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে গত ২০০৫ সালে জেলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৫৬ টি, ক্ষতি হয়েছে ৪৪ লÿ ৮৯ হাজার টাকা, উদ্ধার করা হয়েছে ৮৪ লÿ ৯৯ হাজার টাকার সম্পদ। ২০০৬ সালে অগ্নিকান্ডে ৬৩ টি ঘটনায় ÿতি ৩৪ লÿ ৩৮ হাজার টাকা, উদ্ধার ২ কোটি ৯ লক্ষ ২১ হাজার টাকা, ২০০৭ সালে ৫৩ টি ঘটনায় ক্ষতি ২৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭শ টাকা, উদ্ধার ২ কোটি ৩৮ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা, ২০০৮ সালে ৫৬ টি ঘটনায় ক্ষতি ৬৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭শ টাকা, উদ্ধার ৩ কোটি ১০ লÿ ৭৮ হাজার টাকা, ২০০৯ সালে ৫৬ টি ঘটনায় ক্ষতি ৩৩ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা, উদ্ধার ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা, ২০১০ সালে ৭০ টি ঘটনায় ক্ষতি ২৬ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, উদ্ধার ১ কোটি ১৬ লÿ ৮৮ হাজার টাকা, ২০১১ সালে ৬৮ টি ঘটনায় ক্ষতি ২৮ লÿ ৯৮ হাজার টাকা, উদ্ধার ৮৯ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা, ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যমত্ম ৬২ টি ঘটনায় ক্ষতি ৫৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬শ টাকা, উদ্ধার ১ কোটি ৮২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার সম্পদ। একই সাথে সড়ক দৃর্ঘটনায় গত তিন বছরে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছ সাতক্ষীরার ফায়ার সার্ভিজ। ২০১০ সালে সাতক্ষীরায় ফায়ার সার্ভিস ২০ টি সড়ক দূঘটনার সংবাদ পেয়ে উদ্ধার করেছে ২৪ জন আহত ব্যক্তিকে, ২০১১ সালে সাতÿীরায় ফায়ার সার্ভিস ২৩ টি সড়ক দূঘটনার সংবাদ পেয়ে উদ্ধার করেছে ২৪ জন আহত ব্যক্তিকে এবং ২০১২ সালে সাতÿীরায় ফায়ার সার্ভিস ৩৩ টি সড়ক দূঘটনার সংবাদ পেয়ে উদ্ধার করেছে ৬১ জন আহত ব্যক্তিকে।
কালিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রতিষ্ঠার পর ২০০৭ সালে জেলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২টি, ÿতি হয়েছে ৮০ হাজার টাকা, উদ্ধার করা হয়েছে ১ কোটি ৯০ হাজার টাকার সম্পদ। ২০০৮ সালে ১৪ টি ঘটনায় ÿতি ৫০ লÿ ৬৫ হাজার ২শ টাকা, উদ্ধার ১০ কোটি ১৪ লক্ষ ৮ হাজার টাকা, ২০০৯ সালে ২০ টি ঘটনায় ÿতি ১৬ লÿ ১৭ হাজার ৯শ টাকা, উদ্ধার ৭৬ লÿ ৯৯ হাজার টাকা, ২০১০ সালে ২৮ টি ঘটনায় ÿতি ৪৩ লক্ষ ৫শ টাকা, উদ্ধার ১ কোটি ১০ লÿ ৭৭ হাজার টাকা, ২০১১ সালে ১৫ টি ঘটনায় ক্ষতি ৫৪ লÿ ৩২ হাজার ৫শ টাকা, উদ্ধার ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা, ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যমত্ম ২৪ টি ঘটনায় ÿতি ৪৭ লক্ষ ৬৬ হাজার ২শ টাকা, উদ্ধার ২ কোটি ৮৪ লÿ ৫ হাজার টাকার সম্পদ। আগুন ১০৩ টি। ÿতি ২ কোটি ১২ লÿ৬২ হাজার ৩শ। উদ্ধার ১৮ কোটি ৫৮ লÿ ৮১ হাজার ৮শ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে সুত্রে জানাযায়, প্রতিটি দূঘটনার মূলে রয়েছে অজ্ঞতা, ত্রম্নটি পূর্ণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, ঝুকিপূর্ণ বস্ত্তকে অবহেলা করা ইত্যাদি। সড়ক দূঘটনার ÿÿত্রে অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস মূল কারণ। সট সার্কিট, চুলার আগুন, সিগারেটের টুকরা, খোলা বাতি ব্যবহার, উত্তপ্ত ছাই, যন্ত্রাংশের ঘর্ষন, অগ্নিসংযোগ, উশৃংখল জনতা কর্তৃক আইন ভংগ, মাত্রাতিরিক্ত তাপ সৃষ্টি করা, গ্যাস সিলিন্ডার ইত্যাদি কারণে সাধারণত আগুন লাগাসহ অন্যান্য দূঘটনা ঘটে। এÿÿত্রে কেউ খবর না দিলে তাদের করার কিছুই থাকে না। বিভিন্ন ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ঘটনার আগ পর্যমত্ম তারা ফায়ার সার্ভিস সম্পর্কে কিছু জানত না। অন্যদিকে জেলার অনেক গন্যমান্য ব্যক্তির কাছেও ফায়ার সার্ভিসের কোন নম্বর পাওয়া যায় না। জেলার নতুন বা পুরাতন সকল বিপনীতে সরোজমিনে খোজ নিয়ে দেখা যায় ৯৯% বিপনীতেই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নাই। যা ও দুই একটি দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার দেখা যায় তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এমনকি এর ব্যবহার সম্পর্কে কেউ জানেন না। এককথায় জেলার স্ব- উদ্যোগে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা শূণ্যের কোঠায়। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, এত অজ্ঞতা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের স্বল্পতা ইত্যাদির মধ্যদিয়ে দূর্ঘটনা প্রতিরোধে সফলতা সম্ভব নয়। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাসহ সকল দূঘটনা প্রতিরোধ মহড়ায় সকল সত্মরের জনগনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটি বৃহত্তর প্রত্যয়। দূর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে। প্রতিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা বিশেষ করে ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার রাখতে হবে এবং সেগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিবর্তন করতে হবে। শুধু অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রাখলেই হবে না তা যথাযথ ব্যবহার শিখতে হবে। সর্বোপরি তিনি দূঘটনা প্রতিরোধে সর্বসত্মরের সক্রিয় সহযোগীতা থাকতে হবে।
পরিসংখ্যানে বোঝা যায় যে, জেলার ফায়ার সার্ভিস ফোর্স দূঘটনা প্রতিরোধে যথেষ্ট আমত্মরিক ও সফল। তবে পর্যাপ্ত লোকবল ও সরঞ্জামাদির অভাবে এ সংস্থা তাদের পূর্ণ সফলতা দেখাতে পারে না। খোজ নিয়ে জানা যায়, সাতÿীরা জেলার ৩,৮৫৮.৩৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৭টি উপজেলায়, ৮টি থানায়, ৭৮ টি ইউনিয়নে ১৩৫৬ টি গ্রামে, ৩৬২৫৮৯ টি পরিবারে লোকসংখ্যা রয়েছে ১৯৪৯৮৯৯ জন, এবং রয়েছে অসংখ্য ছোটবড় হাট বাজার। যাহার বিপরীতে জেলায় রয়েছে ২টি ফায়ার স্টেশন। একই সাথে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় এটি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কথা থাকলেও জমি নিয়ে জটিলতার কারনে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এত বিশাল এলাকার এক প্রামত্ম থেকে অন্য প্রামেত্ম যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা। আবার অনেক সময় রাসত্মা চওড়া কম থাকা এবং কাচা রাসত্মা থাকায় গাড়ী নিয়ে যাওয়া কটিন হয়ে পড়ে।
অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয়সাধন করে অগ্নি দুর্ঘটনাসহ যে কোন দুর্যোগ জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, দুর্ঘটনায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, রোগী পরিবহনে এ্যাম্বলেন্স সহায়তা প্রদান, বহুতল/বাণিজ্যিক ভবন, শিল্প কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও মহড়া পরিচালনা এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ। পাশাপাশি জেলার কলারোয়, দেবহাটা, আশাশুনি,শ্যামনগর উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। অন্যথায় যে কোন সময় সাতÿীরায় বড় ধরনের দূর্ঘটনা মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়বে।
উক্ত বিষয়ে সাতÿীরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টাফ অফিসার চার্জইন ডিএডি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমাদের যে জনবল এবং যে যন্ত্রপাতি আছে তা নিয়ে যে কোন ঘটনায় মুভ করার মত। তবে কালিগঞ্জ স্টেশনে জনবল এবং গাড়ী সীমিত। আবার আনেক সময় রাসত্মা কাচা এবং চওড়া কম থাকায় পানিবাহী বড় গাড়ী যেতে খুরই অসুবিধা হয়। আমারা প্রতিমাসে বহুতল/বাণিজ্যিক ভবন, শিল্প কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও মহড়া পরিচালনা করে থাকি। তবে এবিষয়ে বিশেষ ভাবে জন সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই জেলার অগ্নি কান্ডের ঘটনা কমিয়ে ক্ষতির পরিমান কমানো যেতে পারে।