স্টাফ রিপোর্টার
শোক ও শ্রদ্ধায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেছে পুরো জাতি। গায়ে কালো পোষাক, কালো ব্যাজ, সবার চোখে মুখে ছিল শোকের ছায়া। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে সারাদেশের মানুষ। ইতিহাসের এ কালো দিনে শোকার্ত জাতি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য দৃঢ় শপথ নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি পালনে মসজিদে মসজিদে দোয়া, মিলাদ ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো।জাতীয় শোক দিবস ও ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ভোর সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এসময় সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব ওনার প্রদানসহ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দ্বিতীয় বার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা জানানো শেষে বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে সর্বসাধারণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গিয়েও ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুলের পাঁপড়ি বিছিয়ে ফাতেহা পাঠ করেন এবং সেখানে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগের নেতাকর্মীরাও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এছাড়া, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। অন্যদিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় করপোরেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টুঙ্গিপাড়ায় শ্রদ্ধা নিবেদন
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। ঢাকা থেকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সকাল সাড়ে ১১টায় টুঙ্গিপাড়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর মাজারে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল সেখানে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে এবং এ সময় বিউগলে করুন সুর বেজে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে জাতির পিতার সমাধিতে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। এছাড়াও জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী এরপর দলীয় সভাপতি হিসেবে দলের সিনিয়র সদস্যদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে আরেকটি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জাতির পিতার সমাধি সৌধ প্রাঙ্গনে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের সংগ্রাম করছেন প্রধানমন্ত্রী- ওবায়দুল কাদের : বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের সমাধীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার হিসেবে তার স্বপ্ন পুরণ করার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বাধীনতা এবং মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যুগ যুগ ধরে এদেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক- সোহেল তাজ : বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় চার নেতার অন্যতম, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি ও থাকব।
বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। রাজনীতিতে ফিরছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, আসলে আমি তো রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার পিতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমার মা ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। আমাদের রক্তের ভেতরে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি এবং থাকব। বরাবরই বলে এসেছি, আমাকে যদি প্রয়োজন হয়, আমার যদি ডাক পড়ে, আমি সাড়া দেব। আমি আবার রাজপথে থাকব। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত-জোট সরকারের সময় যেমন ছিলাম, ঠিক সেভাবেই থাকব। আমি সে অবস্থানেই আছি।
এর আগে সোহেল তাজ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং তার মা বেগম জোহরা তাজউদ্দিনের কবর জিয়ারত করেন ও ফুল ছিটিয়ে দেন।
খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি- মেয়র আতিক: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।