বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহে মডেল মসজিদ নির্মান প্রকল্পের মেয়াদ হলেও কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।এমনকি মহেশপুর উপজেলার নির্মানাধীন মডেল মসজিদের সামনে কোন সাইন বোর্ড পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।দেখে বোঝার উপায় নেই,মসজিদ না অন্য কোন বানিজ্যিক ভবন নির্মান হচ্ছে।
মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংষ্কৃতিক কেন্দ্র নির্মান প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর পূর্বে, অথচ ঝিনাইদহের ৭ টির নির্মান কাজ গড়ে ৩০ শতাংশ এর নিচে রয়েছে। যার মধ্যে একটির কাজ হয়েছে মাত্র ৯ ভাগ, আর চারটি আছে ২০ ভাগের নিচে। মাত্র দুইটি মসজিদ নির্মানে ৭৫ আর ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
ঠিকাদাররা বলছেন প্রকল্পে ঠিকমতো অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় তারা কাজ করতে পারছেন না। যারা প্রথম পর্যায়ে অর্ধেকের বেশি কাজ করেছেন তারা এখনও কোনো বিল পাননি। যে কারনে তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছেন, বরাদ্ধের পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতির কারনে একটু বিলম্ব হয়েছে। তবে বর্তমানে কাজগুলো সব চলমান রয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সুত্রে জানাগেছে, গোটা দেশে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাষ্কৃতিক দেন্দ্র নির্মান প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহে ৭ টি মসজিদ ও ইসলামিক কেন্দ্র নির্মান শুরু হয়েছে। ৬ উপজেলায় ৬ টি আর জেলায় ১ টি। মসজিদগুলো তিনতলা বিশিষ্ট, যার মিনার থাকবে ৯০ ফুট উচু। বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে ৯২ কোটি ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা,মসজিদ প্রতি বরাদ্দ ১৩কোটী ১৯লাখ ২৭হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়দ ছিল ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হরিনাকুন্ডু মডেল মসজিদ নির্মান কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। কালীগঞ্জ মডেল মসজিদের কাজ শেষ হয়েছে ১২ শতাংশ। সদর উপজেলাটির কাজ শেষ হয়েছে ২০ শতাংশ। এই তিনটি মসজিদ নির্মান করছেন ঠিকাদার টিপু মল্লিক। জেলা পর্যায়ের মসজিদের নির্মান শেষ হয়েছে ১৫ শতাংশ। কোটচাঁদপুরেরটা শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ, শৈলকুপার ২০ শতাংশ। আর মহেশপুর মসজিদটির কাজ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। ইতিপূর্বে বরাদ্ধ পাওয়া গিয়েছিল ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ১৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সম্প্রতি প্রকল্পগুলোতে আরো ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ শহরের পোষ্ট অফিস এলাকায় নির্মানাধীন মসজিদটির মাটির নিচে পাইলিং এর কাজ হয়েছে মাত্র। কাজের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এই কাজের জন্য এখনও কোনো বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। যে কারনে ঠিকমতো কাজ করা যায়নি। যারা বেশি কাজ করেছের তারা বিল না পেয়ে এখন কষ্টে আছেন। তবে বরাদ্ধ এসে গেলে দ্রুত কাজ শেষ করতে পারবেন।
হরিনাকুন্ডু মসজিদ এলাকায় গিয়ে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদার জায়গা নির্বাচন করে দীর্ঘদিন ফেলে রেখেছিলেন। কিছুদিন পূর্বে পাইলিং করেছেন। তারপর আবার কাজ বন্ধ। জেলা মডেল মসজিদ নির্মানাধীন স্থানে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানেও দেখা গেছে নিচতলার কলামগুলো অর্ধেক পরিমান ঢালাই হয়েছে। সদর উপজেলার মসজিদটি নিচ তলার কলামের কাজ চলছে। শৈলকুপা, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের মসজিদগুলোর কাজ কিছুটা বেশি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার টিপু মল্লিক জানান, কাজগুলো দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি পেতে তাদের একবছর সময় চলে গেছে। এরপর নকশা নিয়েও জটিলতা ছিল। সর্বশেষ অর্থবরাদ্ধ না থাকায় তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। তিনি দাবি করেন, যে কাজ তিনি করেছেন তাতে কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ কোটি টাকা বিল পাওনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। এ সকল কারনে মসজিদগুলোর কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না বলে জানান। অপর এক ঠিকাদার এম.এ হাকিম জানান, বরাদ্ধ সমস্যায় কাজ বিলম্ব হয়েছে, তবে বর্তমানে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতির কারনে মূলত বিলম্ব হয়েছে। তবে সবগুলো কাজই বর্তমানে দ্রুত গতিতে চলছে। জেলার কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের দুইটি কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে রয়েছে। অন্য তিনটি দৃশ্যমান হয়েছে। কালীগঞ্জ ও হরিনাকুন্ডুর দুইটি পাইলিং এর কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করছেন দ্রুতই দৃশ্যমান কাজ হবে।তবে মহেশপুরের সাধারন মানুষের অভিযোগ কাজের দেখা শুনার দায়িত্বে থাকা ইন্জিনিয়ার ঠিকমত আসে না,ঠিকাদারের লোকজন ঢালাই কাজের ভিডিও করে তার কাছে জমা দেন।আর তাতেই তার দায়িত্ব পালন হয়।