দেশের ২৫০ উপজেলার মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী আড়াই বছর ধরে কোনো উপবৃত্তি পাচ্ছে না। যে প্রকল্প থেকে এই উপজেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হতো সেই সেকেন্ডারি কোয়ালিটি এডুকেশন অ্যান্ড এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েফ) বন্ধ থাকায় উপবৃত্তিও বন্ধ। ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে এই প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। উপবৃত্তি না পাওয়ায় ঐ সব উপজেলায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের স্কুল ও কলেজের ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। পাঁচটি ভিন্ন প্রকল্প থেকে এ উপবৃত্তি বিতরণের কারণে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। প্রকল্পের ধরন ভিন্ন হওয়ার কারণে উপবৃত্তি বিতরণের কৌশল, ছাত্রছাত্রীর অনুপাত এবং অর্থের পরিমাণও ভিন্ন। যে প্রকল্প চলমান সেখানে উপবৃত্তি বিতরণ কার্যক্রম চলছে আবার প্রকল্প শেষ হলে ঐ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সমন্বয়হীনতায় ভেস্তে যেতে বসেছে একটি মহত্ উদ্যোগ। তবে প্রকল্পগুলো থেকে উপবৃত্তির কার্যক্রম অন্যকোনো একটি কর্মসূচিতে হস্তান্তরের জন্য চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে একাধিক কমিটিও বিভিন্ন সময় কাজ করেছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প থেকে ১৮৭ উপজেলার ১২ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভর্তিকৃত ছাত্রদের মধ্যে ১০ শতাংশ এবং ছাত্রীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ এই উপবৃত্তি পাবার যোগ্য। এতে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ১০০ টাকা করে, ৮ম শ্রেণি ১২০ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণি ১৫০ টাকা হারে মাসিক উপবৃত্তি পাচ্ছে।
তবে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামে (সেসিপ) ছাত্রী উপবৃত্তির সংখ্যা একই থাকলেও ভর্তিকৃত ছাত্রদের ২০ শতাংশকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। এতে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম শ্রেণিতে ১০০ টাকা হলেও অষ্টম শ্রেণিতে ১২৫ টাকা, নবম শ্রেণিতে ১৭০ এবং দশম শ্রেণির যোগ্য শিক্ষার্থীদের ২১০ টাকা হারে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। ৫৪টি উপজেলায় এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়।
সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্পে প্রাপ্য ছাত্রের সংখ্যা ১০ শতাংশ হলে ছাত্রী পাচ্ছে ৪০ শতাংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে। সেকায়েফ প্রকল্পের ছাত্রছাত্রী নির্বাচন প্রক্রিয়াও ছিল ভিন্ন। উপবৃত্তির পরিমাণও অন্যান্য প্রকল্প থেকে বেশি। প্রকল্পগুলো থেকে টিউশনের পরিমাণও কম-বেশি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে স্নাতক পাশ ও সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। ২ লাখ শিক্ষার্থী এই উপবৃত্তি পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের ছাত্র নির্বাচন প্রক্রিয়া ও উপবৃত্তির পরিমাণ ভিন্ন থাকায় এবং প্রকল্পের অধীনে উপবৃত্তি চালু থাকায় সমন্বয়হীনতা কার্যত স্পষ্ট হচ্ছে। কোথাও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী আবার কোথাও কম সংখ্যক শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে। কোথাও আবার উপবৃত্তি বেশি পাচ্ছে, কোথাও কম পাচ্ছে। প্রকল্প শেষ হলে উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উপবৃত্তি বিতরণের ফলে স্কুলগুলো শিক্ষার্থী ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা কমছে। তাই উপবৃত্তি বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না।
কোন কর্মসূচির অধীনে যাবে উপবৃত্তি কার্যক্রম : সব উপবৃত্তি বিতরণ কার্যক্রম একই ছাতার নীচে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও কোন কর্মসূচির অধীনে তা যাবে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অধীনে এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমিটি-উপকমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি একাধিক বৈঠকও করেছে।
অন্যদিকে সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) অধীনে নেওয়ার জন্য কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ। তিনি বলেন, এসইডিপি এর অধীনে সব উপবৃত্তি নেওয়া হবে। এই কর্মসূচিতে এমন কথা বলা আছে। এছাড়া এ সংক্রান্ত বরাদ্দ এই কর্মসূচিতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে নেয়ার বিষয়েও কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাস্ট আইনে সব উপবৃত্তি বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা আছে। সে হিসেবে এই সংস্থার অধীনে নেয়ার জন্য আইনগত ভিত্তি রয়েছে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ সরকারের নিয়মিত বাজেটে ব্যবহার এবং এ নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে কী-না তা দেখা হচ্ছে।