জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এইচএম এরশাদের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি না হওয়া, লিভারের সমস্যাসহ শারীরিক দুর্বলতায় ভুগতে থাকা ৯৩ বছর বয়সী এরশাদ গত কয়েক মাস ধরেই বিছানায়। মঙ্গলবার বিকালে কাঁপুনি দিয়ে তার প্রচণ্ড জ্বর আসে।তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক ঘণ্টা থেকে রাতে আবার বারিধারার বাসায় ফেরেন। অবস্থার অবনতি হলে আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাকে আবারও সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ক্রিটিক্যাল ইউনিটে ভর্তি।
এরশাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আজ বিকালে হাসপাতাল থেকে জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা ইত্তেফাককে জানান- এরশাদের অবস্থা ভালো নয়, গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। চিকিৎসকরা কোনো দর্শনার্থীকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না। অন্য কক্ষে টিভি স্ক্রিনে তার অবস্থা দেখানো হচ্ছে দর্শনার্থীদের। রাঙ্গা বলেন, অবস্থার উন্নতি না হলে আজকালের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে।
এরশাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা তার ব্যক্তিগত স্টাফরা ইত্তেফাককে জানান, মঙ্গলবার বিকাল থেকেই দফায়-দফায় তার জ্বর এসেছে। জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি রয়েছে। এছাড়াও বুকে কফ জ্বমেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে- তিনি সম্ভবত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এরশাদের একটি ছবি পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, নাকে পাইপের মাধ্যমে এরশাদকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে, চেহারা ফ্যাকাসে।
সিএমএইচে এরশাদকে দেখতে যাওয়া জাপার সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ইত্তেফাককে জানান, সন্ধ্যার দিকে এরশাদ মৃদুস্বরে একটু কথা বলার চেষ্টা করেছেন। পরে ওষুধ দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন- জ্বরের কারণে তার শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। সেগুলো নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। হাওলাদার বলেন, বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেছেন- এখন পর্যন্ত যে ধরনের সমস্যা সেটির চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। এরশাদের আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চান হাওলাদার। এরশাদের আরোগ্য কামনায় দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তার ছোট ভাই ও জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ভাইয়ের সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখতে গতকাল বেশিরভাগ সময় তিনি সিএমএইচেই ছিলেন।
আজ সকালে রাজধানীর মতিঝিলে এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে জাপার সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। খোদা না করুক, তার কিছু হয়ে গেলে কী হবে? আমি বলি এরশাদের নির্দেশিত পথে, নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিকভাবে জাপা চলবে। এরশাদ পরিণত বয়সে উপনীত হয়েছেন। অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে, এরশাদের অবর্তমানে পার্টির কী হবে। তার অবর্তমানে কিছু সমস্যা হতে পারে। এখন তার নামে যা হচ্ছে, তখন সেটা হবে না। অর্জন করে নিতে হবে।’ এরশাদ পত্মী ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান, সুনীল শুভ রায় ও মেজর (অব.) খালেদ আখতারসহ দলের নেতারা আজ দিনের বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে ছুটে যান।
আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে জাপা চেয়ারম্যানের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘এরশাদ ভালো আছেন। তিনি ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
কয়েক দফায় বমি করায় সর্বশেষ গত ২২ জুনও সিএমএইচে এক রাত ছিলেন এরশাদ। এর আগে-পরেও সপ্তাহে কয়েকবার তাকে সিএমএইচে নিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে গত কয়েক মাস ধরে তিনি কখনও বাসায়, কখনও হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসার জন্য আগামী ৩ জুন এরশাদের সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা ছিল। বিমানের টিকিটও করা হয়েছিল। এর আগে আগামীকাল শুক্রবার বাড়ির নির্মাণ কাজ দেখতে হেলিকপ্টারে রংপুর যাওয়ার কথা ছিল এরশাদের।
প্রসঙ্গত, গত বছর একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন এরশাদ। দীর্ঘদিন সিএমএইচে ভর্তি থাকার পর গতবছর ১০ ডিসেম্বর তিনি সিঙ্গাপুর যান, দেশে ফেরেন ২৬ ডিসেম্বর। রংপুর-৩ আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও অসুস্থতার কারণে একদিনের জন্যও প্রচারণায় যেতে পারেননি। পরে হুইল চেয়ারে সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। অবস্থার খুব একটা উন্নতি না হওয়ায় গত ২০ জানুয়ারি আবারও সিঙ্গাপুর যান, ফিরেন ৪ ফেব্রæয়ারি। এরপর হুইল চেয়ারে গিয়ে একদিন কিছুক্ষণের জন্য সংসদের অধিবেশনে যোগ দেন।