বিএম ওয়াদুদ মহেশপুর(ঝিনাইদহ)ঃ
মহেশপুর উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিশু শিক্ষার্থীদের নিকট হতে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে মাথাপিচু ১৩৫ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। ডিজিটাল হাজিরার জন্য ডিজিটাল কার্ড দেওয়ার নামে ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই টাকা আদায় করছেন। লিখিত আদেশ ছাড়াই টাকা আদায় করতে গিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অবিভাবকদের তোপের মুখে পড়ছে প্রধান শিক্ষকরা।
মহেশপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে এ উপজেলায় ১৫২টি সরকারী প্রাথমিকে বিদ্যালয়ে মোট ২৭হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়ন রত ।প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর নিকট হতে ১৩৫টাকা আদায় করা হলে মোট ৩৬লাখ৪৫হাজার টাকা উঠবে।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কোন নির্দেশনা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই বিপুল টাকা আদায় করা নিয়ে শিক্ষক অবিভাবকদের মধ্যে অসন্তোস বাড়ছে।
সরকারের অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র, হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিকট হতে এই টাকা আদায় নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে নানা ভুল বোঝাবুঝিও দেখা দিচ্ছে। যে কারনে শিক্ষকরা টাকা তুলতে আগ্রহী না হলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মৌখিক কড়া নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারছে না। এ ছাড়া শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা পরিচালক ( পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এর ২৮.০৪.১৯ তারিখে স্বাক্ষর করা এনামুল কাদের খানের একটি চিঠি ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশ আছে মর্মে একটি চিঠি তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। অবশ্য ঢাকা ও জেলা প্রশাসকের ওই চিঠিতে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায়ের কোনো নির্দেশনা নেই। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বরাদ্ধ থেকে ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই মাস হলো তাদের উপর শিক্ষার্থী প্রতি ১৩৫ টাকা আদায়ের একটা চাপ শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে হালকা ভাবে নির্দেশ দেওয়া হলেও বর্তমানে কঠোর চাপাচাপির মধ্যে টাকা আদায় করানো হচ্ছে। শিক্ষকরা জানান, মার্চ মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করে বিভিন্ন শিক্ষা অফিসের সহকারী কর্মকর্তারা বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের মৌখিক ভাবে প্রতিটি শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থী প্রতি ১৩৫ টাকা করে আদায় করতে বলেন। কিন্তু শিক্ষকরা কোনো অফিস অর্ডার ছাড়া এই টাকা আদায় করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে পরিচালক ও জেলা প্রশাসকের দেওয়া একটি চিঠি তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়। যে চিঠিতে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায়ের কোনো নির্দেশনা না থাকলেও শিশুদের নিকট থেকে টাকা আদায়ে বাধ্য করা হচ্ছে।ইতোমধ্যে ৫/৬টি স্কুলে টাকা তোলা হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাহাবুব আজম ইকবাল ঝড়– বলেন গরীব ছাত্রছাত্রীরা যাতে ঝরে না যায় তার জন্য প্রধানমন্ত্রী সকল ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির আওতায় এনেছে। আর তা বাধাগ্রস্থ করার জন্য শিক্ষা অফিসার ছাত্রছাত্রীদের নিকট হতে ১৩৫টাকা হারে চাঁদা আদায়ের নির্দেশ দিচ্ছেন।আমি সমিতির সভাপতি হিসাবে সকল শিক্ষকদের টাকা চাঁদা আদায় থেকে বিরত থাকতে বলেছি এবং কোন ভাবেই নিয়মবহির্ভূত ভাবে চাঁদা আদায় না করা হয় সে জন্য শিক্ষা অফিসার কে অনুরোধ করেছি।
একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তারা বাবা-মায়ের কাছে এই টাকা চাইলে প্রথমে দিতে চাননি। দরিদ্র বাবার পক্ষে টাকা দেওয়া খুবই কষ্ট হচ্ছে। তারপরও কান্নাকাটি করায় অভিভবকরা দিতে বাধ্য হয়েছেন। আরিফ নামের এক শিশু জানায়, তার বাবা এখনও টাকা দিতে পারেনি। শিক্ষকরা খুবই চাপ দিচ্ছে বলে সে জানিয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসকের দপ্তর হতে ছাত্রছাত্রীদের ডিজিটাল তথ্য সহ হাজিরা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কার্ড দেওয়া ও তার জন্য কোন টাকা আদায়ের কথা বলা হয়নি।মহেশপুর উপজেলার ১৫২টি স্কুলের উন্নয়নের জন্য ৯০লাখ৬০হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকা থেকে ডিজিটাল ডিভাইস কিনতে হবে।অবশিষ্ট টাকা দিয়ে স্কুলের উন্নয়ন মূলক কাজ করতে হবে।
তিনি এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের একটি চিঠি দেখান। চিঠিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা নিশ্চিত করার করার কথা বলা হয়েছে।এ ক্ষেত্রে সিলিপ ফান্ডের টাকা ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিভাইস ক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।তিনি আরো বলেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক ডিজিটাল কার্ড দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের নিকট হতে জনপ্রতি ১৩৫ টাকা তোলার কোন চিঠি দেননি। সরকারী কোন নির্দেশ না থাকা সত্বেও প্রাথমিক শিক্ষকদের কেন টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শাশ্বতী শীল জানান এ উপজেলার ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।
বিএম ওয়াদুদ
মহেশপুর,ঝিনাইদহ
০১৭২১৯২২২০৭