মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, পাবনা :
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন এসেছে। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে প্রাথমিক স্তরে শতভাগ ভর্তি এবং পাশের হার ৯৯% ভাগ নিশ্চিত হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে শতভাগ সাফলতার পর এবার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সাফতার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে শিক্ষাক্ষেত্রে মডেল হিসেবে সারা দেশের মধ্যে উপজেলার নাম উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একরামুল হক বলেন, এক সময়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। বর্তমানে সে অবস্থার পরির্বতন হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার এই আমুল পরিবর্তনের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বাকী বিলাহ কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার এই আমুল পরিবর্তনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান বাকী বিলাহ নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন।
জানা গেছে, একমাত্র শিক্ষাই পারে একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে, এই শোগানকে সামনে রেখে ২০০৯ সালের শুরুতে উপজেলায় শিক্ষা বিষয়ক আন্দোলন শুরু হয়। আর এ আন্দোলনে অংশ নেয় ভাঙ্গুড়া উপজেলার সুশীল সমাজ, স্থানীয় জন প্রতিনিধি, সরকারি বেসরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ সচেতনামূলক সভা-সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শুধু তাই নয় কিভাবে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রায় এক লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়।
সেই সাথে প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্য ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ শিক্ষা সংশিষ্ট সকলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অবহেলা ও দ্বায়িত্বহীনতার অভিযোগে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সাথে বদলে যায় উপজেলার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার সার্বিক চিত্র। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলায় পাশের হার ছিল ৮১ শতাংশ। ২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় পাশের হার বেড়ে ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়। এবং ২০১১ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় পাশের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯.৫ শতাংশে।
যার অক্লাতিক পরিশ্রমে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার এই আমুল পরিবর্তন এসেছে সেই ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বাকী বিলাহ বলেন, আমাদের শিশু কিশোররা অত্যন্ত মেধাবী। তাদের শুধু বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সকলের সামান্য উদ্যোগ সামান্য প্রচেষ্টাই যথেষ্ট। তিনি আরোও বলেন, আমরা যে ভুলটি করেছি, সেই ভুলটি যেন আমাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে না ঘটে। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার সন্তানদের নিয়মিত স্কুলে পাঠান। তার লেখাপড়ার খোঁজ খবর রাখুন। তাকে উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। আপনার সন্তানই পারে আপনার পরিবারের কাঙ্খিত পরিবর্তন ঘটাতে। আপনার এখনও সুযোগ রয়েছে একজন গর্বিত পিতা বা মাতা হবার।
তিনি আরোও বলেন, সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকার দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি দিচ্ছে, বিনামূল্যে পাঠ্য বই সরবরাহ করছে। সরকারের দেওয়া এই সুযোগ গুলো গ্রহণ করে আপনার সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। বর্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থায় বেশ কিছু বাধা রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান বাধা বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষকের সংকট। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণ করার পর এই শুন্য পদটি আর পূরন করা যাচ্ছে না। এই অবস্থার পরিবর্তন করা দরকার। তিনি আরোও বলেন, এক পর্যায় দেখা যায়, উপজেলার ৪৪ টি সরকারী এবং ৫৩ টি বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২’টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যে কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাপক বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে।
শূন্য পদ থাকা বিদ্যালয় সংশিষ্ট এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতিদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষক সংকট দূর করা হয়। যাদের বেতন বিভিন্ন ব্যাক্তিদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ সফলতার পর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সফলতার লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল খানমরিচ ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ময়দান দিঘি উচ্চ বিদ্যালয়, মাদার বাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাড়ি থেকে একেবারে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বিদ্যালয়ের তাদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল বিদ্যালয় গুলোতে এই ব্যবস্থা করা হবে। এত করে শিক্ষার্থীরা সব সময় শিক্ষকদের তত্বাবধানে থাকতে পারছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান বাকী বিলাহ আরোও বলেন, উপজেলার সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি মসজিদের ইমামগণ স্কুল কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে শিক্ষা বিষয়ক আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবো। তিনি বলেন, আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় আলোকিত হবে ভাঙ্গুড়া উপজেলা। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন ভাঙ্গুড়াকে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মডেল উপজেলা হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। খানমরিচ এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফজাল হোসেন বলেন, আমার ছেলে খানমরিচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে লেখা পড়া করে। গত বছর আমার ছেলে পরিক্ষায় খারাপ ফলাফল করে। কয়েক দিন পর উপজেলা চেয়ারম্যান আমার মোবাইল ফোনে কল করে আমাকে কিছু নির্দেশনা দেন। আমি তার দেওয়া নির্দেশনা মতাবেক আমার সন্তানের লেখা পড়া প্রতি নজর রাখায় এ বছর আমার সন্তান খুব ভাল ফলা ফল করেছে।