ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে ৭২ নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জেলার হরিপুর, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও পীরগঞ্জ এই ৪ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত ৩ মাসে নবজাতক মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে এই সংখ্যা ৫০ জন হতে পারে বলে জানায় সিভিল সার্জন অফিস।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল গর্ভবতী, প্রসূতি মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির (এমএনএইচ কার্যক্রম) আওতাভুক্ত। প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের কয়েকটি উপজেলার শত শত গর্ভবতী, প্রসূতি মা ও নবজাতক এই হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু সেই তুলনায় এখানে চিকিৎসক, নার্স ও শয্যা সংখ্যা অত্যান্ত কম।
সদর হাসপাতালের নথি অনুযায়ী গত মার্চ মাসে ২৪ নবজাতক শিশু মারা গেছে। জানুয়ারি মাসে ৩৪ ও ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গেছে ১৪ নবজাতক। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহজাহান নেওয়াজ জানান, এই সমস্ত নবজাতক মারা গেছে জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে। তিনি জানান, একেবারে শেষ মুহুর্তে ভর্তি হওয়ায় এই নবজাতকদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া অজ্ঞতার কারনে ও বিলম্বে ভর্তি হওয়ার কারণে বেশি সংখ্যায় শিশু মারা গেছে। তিনি জানান, এই হাসপাতালে রোগীর চাপ খুব বেশি। গত ৩ মাসে এক হাজারেরও বেশি শিশু রোগী এখানে ভর্তি হয়। শুধু মার্চ মাসেই ভর্তি হয়েছে ৪৫৫টি শিশু । সেই তুলনায় লোকবল খুব কম। শিশু ওয়ার্ডে নার্সের সংখ্যা মাত্র ৩ জন।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ আবু মোঃ খায়রুল কবীর জানান, হাসপাতালের শিশু বেডের সংখ্যা মাত্র ১৮। এমএনএইচ প্রকল্পের অর্থায়নে নতুন ঘর তৈরি করে সেখানে আরো ১৮ টি বেডের ব্যবস্থা করে মোট ৩৬ টি বেড করা হয়েছে। কিন্তু তবু ভিড় সামলানো যাচ্ছেনা। পাশের দুই জেলা থেকে রোগী বিশেষ করে প্রসyুত ও নবজাতক প্রচুর রোগী আসে এখানে। জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জুগিহাট গ্রাম থেকে গুঞ্জরা বেগমের দেড় মাসের শিশু পুত্র শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। মৃতপ্রায় শিশুটিকে নিয়ে এসেছেন ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে। জায়গা না পেয়ে বারান্দায় অন্যান্যদের মত শিশুকে নিয়ে বসেছেন বারান্দায়। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহজাহান নেওয়াজ শিশুটিকে দেখেই ওয়ার্ড বয়কে তাড়াতাড়ি অক্সিজেন দিতে বলেন। বেঁচে গেলো শিশুটি। বৃহস্পতিবার দুপুরের ঘটনা এটি। বিকালে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ বলে জানান চিকিৎসক। শিশু ওয়ার্ডে ও বারান্দায় তখনো ১০২ জন শিশু রোগী। এর মধ্যে রয়েছে ২০ জন ডায়রিয়া ও ৩২ জন শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশু। কিছুক্ষনের মধ্যে ভর্তি হলো আয়েশা, রাসেল, সিয়াম, কৃষ্ণাসহ আরো ৬ শিশু। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহজাহান নেওয়াজ জানান, কয়েকদিন আগেও গড়ে ৮০ টি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু এই হাসপাতালে ভর্তি হয়। এখন এই সংখ্যা কমে গেছে। তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার কয়েকটি উপজেলার গর্ভবতী, প্রসুতি মা ও নবজাতক শিশুরা এই হাসপাতালে আসছে। যে কয়েকটি নবজাতক শিশু মারা গেছে তা পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার রোগী।