উৎসব মুখর বাঙ্গালীর প্রাণের দিন বাংলা নববর্ষ। এ দিনে সমগ্র বাঙ্গালি উৎসবে আনন্দে মেতে উঠবে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার গন্ডি ছাড়িয়ে যাবে বিশ্বের সকল বাংলাদেশীদের কাছে কোটি প্রাণের উচ্ছ্বাস। প্রবাসী বাঙ্গালিরাও দিনভর উৎসবে থাকবেন। দেশ বাধভাঙ্গা উৎমবে মেতে উঠবে। প্রতি বছরের ন্যায় বাঙ্গালি উৎসবে আনান্দে কাটাবে দিনটি। আলোচনা সমালোচনা হবে, হবে নতুন পুরানো দিনের হিসাব। মানুষ মিলাতে থাকবে আগামীর প্রত্যাশা। বছর আসে বছর যায়। আনান্দ-উৎসব হলেও ঘোষণা হয় না জাতীয় কোন অঙ্গিকার। যে অঙ্গিকারের শপথ নিয়ে দেশের মানুষ নববর্ষ পালন করবে। উৎসব মুখর বাঙ্গালি জাতি শ্রেণী-পেশা, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে এক কাতারে দাঁড়াবে। একটি পস্নাটফরমে সকলে এক সুরে কথা বলবে। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভূলে দেশের স্বর্থে, জাতির স্বার্থে, উন্নয়নের স্বর্থে, কল্যানের স্বার্থে সর্বোপরি গণমানুষের স্বর্থে সকলকে বাঙ্গালির এই প্রাণের স্পন্দনের এই দিনে একটি বাক্য পাঠ করতে হবে। এক কাতারে নিয়ে আসতে হবে।
বাংলা নববর্ষ সর্বপ্রথম চালু করেন মুঘল সম্রাট আকবর। তিনি তার রাজ্যের মানুষদের এক কাতারে আনার জন্য বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চালু করেন। সেই থেকে ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ চালু হয়। বাংলার মানুষে মধ্যে এক ঘেয়েমি দূর করার জন্য তিনি সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলে। তখন বাংলায় উৎসবের কমতি ছিল না। বাংলার মানুষ নির্দিষ্ট লÿ্যকে সামনে রেখে উৎসব করত আনান্দ করত। কাধে কাধ মিলিয়ে দেশের শমিত্মর জন্য, কল্যানের জন্য প্রার্থনা করত। করত নতুন পুরাতনের হিসাব। সাস্প্রদায়িক সাম্প্রতি বজায় রেখে মানবতার জন্য কাজ করার অঙ্গিকার করত।
সম্রাট আকবরের প্রবর্তন করা বাংলা নববর্ষ আজ আমাদের সংস্কৃতির প্রধান অংশ। তার দেখানো পথে আমরা চললেও ভালো ভাবে চলতে পারছি না। নববর্ষ নতুনকে বরণ করে নেওয়ার যে দৃড় প্রত্যয় নিয়ে হয়েছিল তার কোন বাসত্মবায়ন আজ হচ্ছে না। বর্তমানে আমাদের দেশে নববর্ষ মানে সাদা ফতুয়ার উপর লাল আলপনা পরে ঘুরে বেড়ানো। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে সীমাহীন প্রামেত্ম আড্ডা নেওয়া। তাদের সথে সারাদিন আনান্দ করা। অসীমের উদ্দেশ্যে আজানায় পাড়ি জমানো। আর নতুন নতুন পোষাক পরিধান করা। কোথাও নববর্ষ উপলÿÿ বিভিন্ন মেলা বসে। পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর পার্কে সমায় কাটানো। আর সকালে পামত্মা ইলিশ খাওয়ার পতিযোগিতা করা। যেন বাংলার মানুষ বছরের কখনও এগুলো খায় না। আর এই সবগুলো হয় বিচ্ছিন্ন ভাবে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ উপলÿÿ র্যালী বা শোভাযাত্রা বের হলেও থাকে না নির্দিষ্ট কোন লÿ্য। কোন কিছুর মধ্যে কোন পরিকল্পনা থাকে না। অবস্থা যেন পালন করতে হয় তাই পালন করা।
বাংলা নববর্ষ বাঙ্গালি জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নববর্ষকে ঘিরে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয়প্রধান, সরকার প্রধান কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা বিভিন্ন দপ্তরে পাঠাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন ঘণিষ্টজন, আপনজনসহ বিভিন্ন সত্মরের মানুষের কাছে। কিন্তু যে বিষয়টি আবাক করার মত সেটি হল জাতীয় কোন অঙ্গিকার নেই। ফলে হাজার বছরের মত এই নববর্ষও কালেও গর্ভে হারিয়ে যাবে। জাতীয় অঙ্গিকার না থাকায় সংবাদমাধ্যমগুলো পরদিন শিরোনাম করে বিভিন্ন ভাবে। তারা বিভিন্ন জাতীয় অঙ্গিকারের কথা উলেস্নখ করে। ফলে জাতির মধ্যে বিভ্রামিত্ম সৃষ্টি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে দুই ধারার রাজনীতি প্রবাহিত হচ্ছে। সমগ্র মানুষও তাই দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। জাতীয় সংস্কৃতির মত কোন অনুষ্ঠান দুই ধারার সকল ব্যক্তিই এক কাতারে আসে। । এ সকল ব্যক্তিরাও সংস্কৃতির সাথে থাকে। তারাও দেশের মানুষের মত জাতীয় অনুষ্ঠান পালন করে। লালন করে সংস্কৃতি। ফলে এই দুই ধারার মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে হবে। তবে আমাদের দেশের জন্য মঙ্গল। আর এ জন্য প্রয়োজন বাংলা নববর্ষে জাতীয় কোন অঙ্গিকার। যে অঙ্গিকারে আবন্ধ হয়ে দেশের মানুষ যার যার অবস্থানে থেকে সুজলা সুফলা বাংলার জন্য কাজ করবে। ##লেখক : নাজমুল হক, নির্বাহী সদস্য, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, ঢাকা কমিটি,