মৌলভীবাজার থেকে আবদুল হাকিম রাজ ঃ
রাজনগরে কুখ্যাত আলতা বাহিনীর জবরদখলে ভূমিহীনদের লীজপ্রাপ্ত ভূমি। জানা যায়, ভূমিহীনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে ভূমিহীন হিসাবে সরকারী খাস ভূমিতে ভোগদখলে থাকা ভূয়া ভূমিহীনের আবেদন বাতিল এবং ২৪ জন প্রকৃত ভূমিহীনকে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন ১নং ফতেপুর ইউনিয়নস্থিত ইসলামপুর (সোনালৌহা) গ্রামের ২.৬৪ একর খাস ভূমি লীজ দেয়া হয়। বতিলকৃত ভূয়া ভূমিহীন আছকর মিয়া পরবর্তীতেও খাস ভূমি লীজপ্রাপ্তির জন্য একাধিকবার আবেদন করেন এবং প্রতিবারই তদন্তে তিনি ভূয়া ভূমিহীন প্রমানীত হন। এব্যাপারে ইউপি সনদপত্র না দেয়ার কারণে তিনি তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান জামি আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছিলেন। লীজ প্রাপ্তিতে বার বার ব্যর্থ আছকর মিয়া তার ভোগদখলে থাকা খাস ভূমিতে টিকে থাকার জন্য সমমনা ভূয়া ভূমিহীনদেরকে নিয়ে জোট বেঁধেছে এলাকার কুখ্যাত আলতা মিয়ার সাথে। তারই সার্বিক সহায়তায় আব্দুল হাসিম, ছোরাব মিয়া, ফটিক মিয়া, জাহেদ মিয়া, বাবুল মিয়া, মতালিব মিয়া, মকদ্দুছ মিয়া, জগলু মিয়া, অজুদ মিয়া, কয়েছ মিয়া, বিলাল মিয়া ও আব্দুল আবুল মিয়াকে নিয়ে কুখ্যাত আলতা মিয়া স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়েছে এবং সেই সুবাদে মাত্র কিছুদিন আগে আলতা মিয়া বেশ কিছূ খাস ভূমি দখলে নিয়ে বিশাল পাকা দালান নির্মান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই এরা এলাকায় আলতা বাহিনী নামে পরিচিতি পেয়েছে। তারা প্রচারনা চালাচ্ছে- উক্ত ভূমি ভোগদখলকারী প্রকৃত ভূমিহীনদেরকে লীজ না দিয়ে এলাকার কয়েকজনসহ পার্শ্ববর্তী সোনাপুর এবং ইসলামপুর গ্রামের লোকজনকে লীজ দিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে- উক্ত খাস ভূমির অবস্থান ইসলামপুর গ্রামে। সোনাপুর হচ্ছে ইসলামপুর গ্রামের সংলগ্ন গ্রাম। অনেকটা জমজ সমত্মানের মতই গ্রামদু’টির অবস্থান। খাস ভূমিতে ভোগদখলে থাকা ভূমিহীন ও ভূয়া ভূমিহীন লোকজন খাস ভূমিকে আলাদা গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সোনালৌহা মৌজার নামে খাস ভূমির নামকরণ করে। রেকর্ডপত্রে এটি ইসলামপুর গ্রাম এবং রেকর্ডপত্রে সোনালৌহা নামে কোন গ্রামের অসিত্মত্ব নেই। নিজেদেরকে ভূমিহীন দাবীদার চিহ্নিত অপরাধী কুখ্যাত আলতা মিয়াসহ ১৪ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন প্রকৃত ভূমিহীন থাকলেও, বাকী ১২ জনের কেউই ভূমিহীন নয়। উক্ত খাস ভূমিতে আছকর মিয়ার রয়েছে বিশাল পাকা বসতঘর, রয়েছে ২টি সিএনজি অটোরিক্সা ও অবৈধ দাদন ব্যবসা। তার কয়েকজন ঘনিষ্ট আত্নীয়-স্বজন রয়েছে প্রবাসী। কুখ্যাত আলতা মিয়া বসতভিটা উক্ত খাস ভূমিতেই গড়ে তুলছে বিশাল পাকা দালান। তার রয়েছে বিপুল পরিমান কৃষিজমি ও অবৈধ সুদ ব্যবসা। বাকী ১০ জনের অবস্থাও কমবেশী এরকমই। কিন্তু, লীজপ্রাপ্ত ২৪ জনই প্রকৃত ভূমিহীন এবং পাশাপাশি এলাকার লোক। প্রকাশ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১ বার এবং ফতেপুর ইউপি কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার ও মহিলা মেম্বারের উপস্থিতিতে ১ বার যাচাই-বাছাই ছাড়াও, সরেজমিন গোপন তদন্তের মাধ্যমে ভূমিহীন হিসাবে নিশ্চিত হয়েই এ ২৪ জনকে খাস ভূমি লীজ দেয়া হয়। এদের মধ্যে ভূমিহীন এশ্বাদ মিয়া ও আব্দুল আমিন হচ্ছে ভূয়া ভূমিহীন আছকর মিয়ারই আপন ভাই ও ভাতিজা। ভূুমিহীন দাবীদার ১৪ জন তাদের ঘরে মজুদ রেখেছে রাম-দা, কিরিচ, ছুলফি, জাঠা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। ভূমিহীনদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধিয়ে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে জিম্মি করে ফায়দা হাসিলের জন্যই তাদের এ অপপ্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে ভূুমিহীন দাবীদার ১৪ জনের মধ্যে প্রকৃত ভূমিহীন রয়েছে ২ জন। অপরদিকে, লীজপ্রাপ্ত ২৪ জনই প্রকৃত ভূমিহীন। ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান লয়লুছ বলেন, ইসলামপুর (সোনালৌহা) গ্রামে খাস ভূমি সংক্রান্ত তেমন কিছুই আমি জানিনা। আমি আশা করব, সরকার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ভূয়া ভূমিহীনদেরকে বিতাড়িত করে প্রকৃত ভূমিহীনদেরকে খাস ভূমি লীজ দিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেবেন। রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিতোষ হাজরা বলেন, আমি এখানে আসার আগে হলেও অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভূমিহীনদেরকেই লীজ দেয়া হয়েছে। তারপরও, যদি কোন ভূয়া ভূমিহীন লীজ পেয়ে থাকে এবং ভূমিহীনদের নামে লীজ নিয়ে অন্য কেউ ভোগদখলে থাকে তাহলে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।