শাকিল আহম্মেদ, ঠাকুরগাঁও :
ঠাকুরগাঁওয়ে বিদ্যুতের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২/৩ ঘন্টাও ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাওয়া যায়না। শহরাঞ্চলের চাইতে গ্রাম পর্যায়ে এ অবস্থা আরো খারাপ। এ কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সংশিষ্টরা জানান, গত কয়েক দিনে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সারাদিনে এখন ৫-৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। ফলে কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়ালেখাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘন ঘন লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের কারণে তাদের বাসার টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, জেনারেটর, বাল্ব, পানির পাম্পসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বোরো ক্ষেতে পানি দিতে না পেরে আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সেচ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও অধিকাংশ এলাকায় ৪-৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে বোরো ক্ষেতে ধানের চারা মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জানা গেছে, এখন পিক কিংবা অফ পিক নেই; গোটা সময়েই লোডশেডিংয়ের চিত্র একই ধরনের। সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বিভিন্ন এলাকায় গড়ে দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। সেখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। একবার বিদ্যুৎ গেলে তা কখন আসবে তা কেউ জানে না।
শহরের বসিরপাড়া মহলার গৃহিণী আয়েশা খাতুন জানান, গত কয়েক দিন ধরে গভীর রাতেও লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, এখন আইপিএস চার্জ করারও সময় পাওয়া যায় না। বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে জেনারেটরের লাইন চার্জও। তার কারণে বাধ্য হয়ে অধিকাংশ সময় অন্ধকারেই কাটাতে হচ্ছে। হাজীপাড়া মহল্লার আব্দুস সালাম জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সে ঠিকভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। প্রচন্ড গরম, তার ওপর মোমবাতির স্বল্প আলোয় পড়তে গিয়ে তার মাথা ব্যথা হচ্ছে।
সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার পর সকাল ৭টা পর্যন্ত সেচ চালানোর জন্য কৃষকদের চাপ দেওয়া হলেও সে সময়েও ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকেনা। সারা রাতে ৭/৮ বার বিদ্যুতের ট্রিপ দেয়। তাও আবার ১৫-২০ মিনিটের বেশি বিদ্যুৎ স্থায়ী থাকেনা। দিনের বেলা এ অবস্থা আরো ভয়াবহ। এ অবস্থায় ইরি-বোরো চাষিরা জমিতে সেচ দিতে পারছেনা। সময়মত সেচ দিতে না পেরে বোরো ক্ষেত ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পলী বিদ্যুৎ পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি রুহুল আমিন জানান, বর্তমান মৌসুমে ঠাকুরগাঁও পলী বিদ্যুতের আওতায় ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার জন্য বিদ্যুতের চাহিদা ৬৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পিক আওয়ারে (সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা) সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ১৮ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে (রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা) সরবরাহ মিলছে মাত্র ১৩ মেগাওয়াট। এ কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ লোডশেডিং দিয়ে আসছে।