নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এবং নারায়নগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের জন্য জেলাটির তৃণমূল নেতাদের কাছে লিখিত পরামর্শ চাইলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের দ্বন্দ্ব সংঘাত ভুলে এক হয়ে কাজ করারও আহবান জানালেন। আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় তিনি এ আহবান জানান। অনুষ্ঠানে তিনি আওয়ামী লীগের জন্য ওসমান ও চুনকা পরিবারের অবদানের কথাও তুলে ধরেন। নারায়ণগঞ্জকে আওয়ামী লীগের ‘বড় ঘাঁটি’ উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বন্দ্ব-মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে আওয়ামী লীগ এক হয়ে কাজ করতে পারে।
গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন দলের সভাপতিম লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কাজী জাফর উল্যাহ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ ও দীপু মনি, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুলস্নাহ এবং সাবেক সেনা প্রধান কে.এম শফিউলস্নাহ। নারায়ণগঞ্জ জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ছাড়াও জেলার চারজন সাংসদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এবং ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা সেলিনা হায়াত আইভী, সংসদ সদস্য সারা বেগম কবরী ও গোলাম দসত্মগীর গাজী বসেছিলেন সামনের সারিতে। অন্যদিকে, শামীম ওসমান বসেন মঞ্চের ডানপাশে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। বাম পাশে অন্য নেতাদের সঙ্গে বসেন সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক বক্তব্যে শামীম ওসমানের দাদা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহকর্মী খান সাহেব ওসমান আলীর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খান ওসমান সাহেবের বাড়িতে বসেই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। শামীম ওসমানের বাবা শামসুজ্জোহা এবং আইভির বাবা আলী আহমেদ চুনকার কথাও তিনি তার বক্তব্যে উলেস্নখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে জোহা সাহেবের (শামসুজ্জোহা) অবদান ছিলো। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে আলী আহমেদ চুনকার অবদান ছিলো। তিনিই নারায়ণগঞ্জে সংগঠনকে ধরে রেখেছিলেন। এই দুই নেতা এখানে নেই। আমি দেশে ফিরে তাদের পেয়েছি।
অনুষ্ঠানে আইভী তার কয়েকজন অনুসারী নিয়ে উপস্থিত হলেও শামীম ওসমান এসেছিলেন বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে। নারায়ণগঞ্জের এ দুই নেতা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চাইলে গত বছর অক্টোবরে স্থানীয় নেতাদের মধ্যেও বিভক্তি তৈরি হয়। দলের নীতি নির্ধারকরা স্থানীয় পর্যায়ে পরামর্শ না করেই সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে সর্মথন দিলে পদত্যাগ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এস এম আকরাম। শেষ পর্যমত্ম আইভীর কাছে শামীম ওসমান বিপুল ভোটে পরাজিত হন। নির্বাচনের দুদিন পর একই দিনে গণভবনে এসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এ দুই নেতা। এস এম আকরামের পদত্যাগটি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু না বলে মত বিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আহবায়ক তো পদত্যাগ করেছেন। এখন যুগ্ম আহবায়ক কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মফিজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন এবং শেখ হাসিনার হাতে দলীয় প্রতিবেদন তুলে দেন। এরপর, শেখ হাসিনা আড়াই হাজার থানা আওয়ামী লীগের পÿ থেকে কাউকে বক্তব্য দেয়ার জন্য ডাকলে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু এগিয়ে যান। তবে শেখ হাসিনা তাকে বলেন, এটা এমপি সাহেবদের অনুষ্ঠন না। আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান।
নারায়ণগঞ্জে দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় দুর্বলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন সম্মেলন সবই হয়েছিলো। কিন্তু, সম্মেলনটা হয়নি। কেন হয়নি তা আমি জানি। নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশন হওয়ায় এখন সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগ এবং জেলা আওয়ামী লীগের আলাদা কমিটি হবে। এ দুটি কমিটি গঠন করার জন্য নারায়ণগঞ্জের নেতাদের কাছে লিখিত পরামর্শ চান শেখ হাসিনা।