শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) থেকে : শিহাব মল্লিক
অনিয়ম-দুর্নীতি আর জালিয়াতির কারখানা শৈলকুপা গ্রামীণ ব্যাংক উমেদপুর শাখার কুকীর্তি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত ৩৮ জনের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়েছে। ব্যাংক ম্যানেজার রেজাউল করিম গ্রাহকদের প্রায় টাকা তসরূপ করে রাতের আধারে পালিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ ম্যানেজারকে আড়াল করে এলাকায় ব্যবসা চালাতে নানাবিধ গল্প ফাঁদলেও ক্রমেই থলের বিড়াল বের হচ্ছে।জানা যায়, নিয়মিত আমানতকারীরা প্রচুর অভিযোগ অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমানপত্র হাতে হাজির হচ্ছে শৈলকুপা গ্রামীণ ব্যাংকে। গ্রাহকদের সামাল দিতে রীতিমত হিমসিম খাচেছ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দিনভর অসহায় হতদরিদ্র ভুক্তোভোগীদের হৈচৈ, শোর-চিৎকার আর অর্থের হিসাব পেতে ধর্না দিচ্ছে শৈলকুপা অফিসে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একরামুল কবীর জানান, গ্রাহক ভোগান্তির সুযোগ নেই আমানতকারীদের লোপাট হওয়া অর্থের হদিস খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে গত বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ টিম তদমত্ম চালাচ্ছে। গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যমত্ম সবচেয়ে বেশি টাকা তসরূপ হয়েছে বলে তিনি জানান।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, শৈলকুপা গ্রামীণ ব্যাংক উমেদপুর শাখার কার্যক্রম শুরু থেকেই অনিয়ম দুর্নীতিগ্রস্থ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তবে রেজাউল করিম শৈলকুপা অফিসে ম্যানেজার হিসাবে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা বেড়ে যায় আশংকাজনক হারে। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী গুটি কয়েক সরকার সমর্থকের মদদে আলো-আধাঁরে অপকর্ম করেছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু রেজাউল করিম নয় এর সাথে গত কয়েক মাস ধরে কয়েক কর্মচারী এর সাথে রয়েছে।
গোলক নগর গ্রামের কাজী কামাল উদ্দিন জানান, তার সঞ্চয়ী হিসাব নং-১০০১৩৬, পাস বইয়ে জমাকৃত ৫ লাখ ১১ হাজার, ৫শ ১৮ টাকা বর্তমানে অফিস লেজারে ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা আছে, বাকি টাকা উধাও। মৌকুড়ি গ্রামের শহীদুল ইসলামের ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার স্থলে ৬৮ হাজার টাকা বর্তমান। এরকম বহু গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা রেজাউল ইসলাম ভূয়া চেক বই তৈরি করে নিজ দাপটে উঠিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের রাখা আমানত আত্মসাৎ, পাস বই আপডেট থাকলে অফিস লেজারে কারুচুপি আবার অনেকের সাথে ব্যক্তি সম্পর্কের সুবাদে টাকা নিয়ে ব্যাংক অনুকুলে জমা না করা জাতীয় অভিযোগের অন্ত নেই। অফিস পরবর্তি সময়ে গাঁজা ফেন্সিডিল সেবনের পাশাপাশি প্রভাবশালী মদখোর চক্রের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাতের বেলা গ্রামীণ অফিস আড্ডাখানায় পরিনত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক পাতি নেতার খপ্পড়ে পড়ে ম্যানেজার রেজাউল ইসলাম সর্বস্ব হারিয়েছেন। তিনি বলেন, মামা-খালু, আপা-ভাবি বানিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের বাসায় যাতায়াতের সুযোগে একক ব্যবসা চালাতে অলিখিত অর্থ লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাছাড়া রাতের বেলায় গাঁজা-ফেন্সিডিল গ্রহনের সুবাদের চক্রটির সাথে তার কঠিন সখ্যতা গড়ে ওঠে ফলে লাখ লাখ টাকা বিনষ্ট করেছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বীকার করে বর্তমান ম্যানেজার একরামুল কবীর জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী গ্রাহকগণ তাদের পাস বই ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে হাজির করলে অবশ্যই শতভাগ গ্রাহকসেবা প্রদান করবেন। তবে পূর্বের ম্যানেজারের স্বেচ্ছাচারিতার কারনে বর্তমানে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।