ঢাকা ডেস্ক ও ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃরাজধানীর ইডেন কলেজের সামনে থেকে ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হওয়া ভোলার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মো. জাবেদ ইমামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ রোববার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ গুরুতর অসদাচরণের শামিল। এছাড়াও কোন সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তার হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন বলে গণ্য হওয়ার বিধান আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ভোলার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মো. জাভেদ ইমামকে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইডেন কলেজের সামনে থেকে ৩৪২ বোতল ফেনসিডিলসহ জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ জাবেদ ইমামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ এ ঘটনায় একটি মাইক্রোবাস ও একটি পিস্তল জব্দ করেছে।ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন,
ঝিনাইদহের জাবেদকে নিয়ে তোড়পাড়ঃ
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে শুক্রবার রাতে দুই কার্টন ফেনসিডিল ও অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাবেদ ইমামামের (৩০) বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া সিদ্দিকিয়া সড়কের এ্যাডভোকেট খালেদ ইমামের ছেলে। আটক জাবেদ ইমাম ভোলা জেলার সিনিয়র সহকারী জজ।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে গোপন খবরের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে পুলিশের একটি দল নিউমার্কেট পেট্রোল পাম্পের সামনে পার্কিংরত অবস্থায় একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্টোঃ চ-১১-৭০৯৬) আটক করে। পুলিশ আটককৃত মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে একটি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গুলি, ২টি কার্টুন ও ১টি প্লাস্টিকের বস্তা ভর্তি ৩৪২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। জাবেদ ইমাম নিজেই গাড়ির চালক ছিলেন। অভিযানকারী পুলিশ দল তাকে ভুয়া জজ মনে করে আটকে রেখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খবর দেয়। পুলিশ কর্মকর্তারা প্রাথমিক যাচাই করে আটক ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিব্রতবোধ করেন। শুক্রবার রাতে সিনিয়র সহকারী জজ জাবেদ ইমামকে ফেনসিডিলসহ গ্রেফতারের পর এমন ঘটনা ঘটে। এদিকে ঝিনাইদহের ছেলে জাবেদের গ্রেফতার হওয়া নিয়ে শহরে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
জাবেদ সাংবাদিকদের জানান, ভোরে তিনি যশোরে সুমনের কাছ থেকে ফেনসিডিলগুলো নিয়ে ঢাকায় আসেন। এগুলো ঢাকায় লিঙ্কন নামে এক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। ফেনসিডিল বহনকারী মাইক্রোবাসটি তার বাবার নামে এবং পিস্তলটি নিজের নামে লাইসেন্স করা বলে দাবি করেছেন তিনি। স্ত্রীর সন্তান হচ্ছে না জানিয়ে তার চিকিৎসায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রয়োজনে এই প্রথম ফেনসিডিলগুলো বহন করেন বলে জাবেদের দাবি। এ জন্য পূর্বপরিচিত যশোরের সুমনের কাছ থেকে তিনি টাকা ধার চান। টাকা দেওয়ার বিনিময়ে তাকে সুমন ফেনসিডিল বহন করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। পুলিশ জানিয়েছে, জাবেদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি কাগজ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব কাগজে এক হাজার, ৮শ’ ও ৭শ’ বোতল করে মোট প্রায় ২ হাজার ৪শ’ বোতল ফেনসিডিল বিক্রির তথ্য লেখা রয়েছে। এসব কাগজে পাইকারি মূল্য হিসেবে প্রতি বোতল ফেনসিডিলের দাম ৩৬০ টাকা লেখা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ফেনসিডিল তিনি রাজধানীর বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ঝিনাইদহের কাঞ্চননগর মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন জাবেদ ইমাম। ২০০০ সালে সরকারি কেসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ২০০৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের আইন বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। এরই মাঝে বিয়ে করেন ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ বাচ্চুর বড় মেয়েকে। ২০০৮ সালে প্রথম ব্যাচে তিনি জুডিসিয়াল কমিশনের মাধ্যমে সহকারী জজ হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। প্রথমে তিনি কুষ্টিয়া জেলা জজকোর্টে দায়িত্ব পেলেও অনিয়মের অভিযোগে যশোরের জজকোর্টে তাকে বদলি করা হয়। যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৯ নভেম্বর তিনি ভোলার সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে বদলি হন। জাবেদের গ্রামের বাড়ি হরিণাকুন্ডু উপজেলার বৈঠাপাড়ায়। ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া সিদ্দিকিয়া সড়কে তাদের একটি দুইতলা বাড়ি রয়েছে। জেলা শহরে আসার আগে তার পিতা খালেদ ইমাম হরিণাকুন্ডুর আন্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন। পরে চাকুরী ছেড়ে তার বাবা ঝিনাইদহ জর্জ কোর্টের আইনজীবি হন। #