৩ জানুয়ারি রাতে অভিনেত্রী আশা চৌধুরী নিহত হওয়ায় ঘটনা নিয়ে তিন রকম তথ্য দিয়েছেন মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদ। তিনি প্রথমে বলেছিলেন পথ ভুলে রাস্তায় ঘুরছেন। পরে জানান, রাস্তা পার হতে গিয়ে আশা ট্রাকের ধাক্কায় মারা গেছেন। শেষে জানান, রাস্তার মোড় ঘোরার জন্য তাঁরা দুজনই মোটরসাইকেলে বসে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর এসব কথায় সন্দেহ হয় আশার পরিবারের। যে কারণে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন আশার বাবা। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে আড়াই ঘণ্টার হিসাব দিয়েছেন চালকমামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহান আহমেদ বলেন, ‘গ্রেপ্তারে হওয়ার পরে বাইকচালক শামীম আহমদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় তিনি জানান, আড়াই ঘণ্টা তিনি অভিনেত্রী আশাকে নিয়ে মিরপুর, টেকনিক্যাল মোড় এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে ঘোরাঘুরি করেছেন। কিন্তু তাঁরা বনানী থেকে আড়াই ঘণ্টা কোথায় গিয়েছিলেন, কী করেছিলেন সেসব ঘটনা ও তার পেছনের ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন তদন্ত দল। ।
তিনি বলেন, ‘আশার পরিবারের দাবি, তাঁকে মাদক বা নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়ে থাকতে পারে, সেটা আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলেই জানতে পারব। তবে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এটা ঠিক। কিন্তু তার আগে আড়াই ঘণ্টায় অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটা আমরা তদন্ত করব। তদন্তের স্বার্থে চালককে আমরা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারি।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। যে কারণে একেকবার একেক কথা বলেছেন। একবার বলেছিল পথ ভুলে গেছেন; কখনো বলছেন, আশা রাস্তা পার হচ্ছিলেন। শামীমের দাবি, মূলত তাঁরা রাস্তার মোড় ঘোরার জন্য মোটরবাইকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে একটি ট্রাক তার বাইকের পেছনে ধাক্কা দিয়ে আশাকে ২০ ফিট দূরে ফেলে দেয়। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনার সেই ভিডিওটি থানা কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছেন ঘাতক ট্রাক ও চালককে ধরতে।
মোটরবাইক চালক শামীম আহমেদ বিভিন্ন রকম কথা বলায় আশার পরিবারে সন্দেহকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আশার বাবা আবু কালাম জানান, দুর্ঘটনার রাতেই শামীমের কথায় তাদের সন্দেহ হয়। সেই রাত থেকেই তারা চোখে চোখে রাখে। পরের দিন লাশ পোস্টমর্টেমের সময় শামীমকে সন্দেহ করে তারা পুলিশের হাতে দেয়।
তিনি বলেন, ‘বারবার সে কেন কথা বদলাচ্ছে, সেটা আমরা জানি না। ঘটনার সঙ্গে শামীম জড়িত সন্দেহ মামলা করেছি। পুলিশ আমাদের সন্দেহ দূর করে ট্রাকচালকসহ জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনুক।’শুরুতে গাজীপুরের বোর্ড বাজার থেকে ফেরার কথা বলা হলেও আশার পরিবার থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে বনানী এলাকা থেকে রওনা হয়েছিলেন আশা। ৩ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে আশা তাঁর মাকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি বনানীতে আছেন। ২০ মিনিটের আশাদের মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসায় ফেরার কথা ছিল। আশার মা-বাবা ধরে নিয়েছিলেন মেয়ে বাসায় ফিরতে বড়জোর সাড়ে ১১টা বাজতে পারে। রাত প্রায় দুইটার দিকে আশাকে বহন করা মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদ অভিনেত্রী আশার পরিবারকে ফোন দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনান কথা জানান।
চার বোনের মধ্যে আশা চৌধুরী বড়। রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউবিটি) আইন বিভাগে সপ্তম সেমিস্টারে পড়াশোনা করতেন তিনি। প্রায় চার বছর আগে তিনি অভিনয় জগতে আসেন। নাটকে অভিনয়, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ছাড়াও তিনি বিজ্ঞাপন ও গানের মডেল হয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেবেন।
রিপোর্ট »শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী , ২০২১. সময়-১১:০৬ pm | বাংলা- 25 Poush 1427