ডেস্ক রিপোর্ট :: রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশি বাধা, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে সারাদেশে দুই শতাধিক জামায়াত-শিবির কর্মী গ্রেফতার এবং দেড়শতাধিক আহত হয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতি দাবি করা হয়, তাদের ৪০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রশিবির দাবি করেছে, পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় শিবিরের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিবির কর্মীরা পুলিশের গাড়িসহ অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করেছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আজ (মঙ্গলবার) বেলা পৌনে তিনটার দিকে ছাত্রশিবিরের মিরপুর থানা কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহিয়া, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি সাজ্জাদ হোসাইনের নেতৃত্বে কয়েকশ’ শিবির কর্মী মিছিল একটি বের করেন। মিছিলটি পূরবী সিনেমা হলের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ হরতাল সমর্থকদের লক্ষ্য করে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে এবং গুলি বর্ষণ করে। এতে শিবিরের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। আহত নেতা-কর্মীদের ধরে বেধড়ক পেটায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা। এক পর্যায়ে তাদেরকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। এদের মধ্যে নিজামউদ্দিন নামে এক শিবির কর্মীর মৃত্যুর খবর কিছু কিছু মিডিয়ায় ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে প্রচারিত হয়। ঘণ্টাখানেক রাস্তায় পরে থাকার পর আহত শিবির কর্মীদেরকে পুলিশ স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তাদেরকে পল্লবী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সুচিকিৎসা না পাওয়ায় তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বলে শিবির অভিযোগ করেছে। এর আগে আজ (মঙ্গলবার) দিনের শুরুতেই জামায়াত-শিবির সমর্থকরা রাজধানীর ফার্মগেট, খিলগাঁও, খিলক্ষেত, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও শ্যাওড়াপাড়ায় মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করার প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশের গাড়ীসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এছাড়া, তারা বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। রাজধানীতে পুলিশ জামায়াতের মতিঝিল থানা আমীর কামাল হোসাইনসহ ৬৯ পিকেটারকে আটক করেছে।
আজ ঢাকার বাইরে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, ভোলা, লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এ সময় আহত হয় অন্তত পাঁচ জন। পুলিশ ওই এলাকা থেকে ১৩ জনকে আটক করেছে।
সিলেটে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গাড়ি ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। পিকেটারদের লক্ষ্য করে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ মহানগর শিবিরের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক সেলিম আহমদসহ ৪ জনকে আটক করে। হরতালের কারণ সিলেট নগরীর বিভিন্ন সড়কে মঙ্গলবার ভোর থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শাহাজানপুর, দুপচাচিয়া, শেরপুর ও সদর থেকে পুলিশ মিছিল ও পিকেটিং করার সময় ১০ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখে হরতাল সমর্থকরা। পরে পুলিশ জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ধাওয়া করলে জবাবে তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শিবিরকর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সেখান থেকে পুলিশ ৫ জনকে আটক করে।সাতক্ষীরায় হরতালে জামায়াত-শিবির কয়েক দফা ঝটিকা মিছিল করে। পিকেটাররা প্রধান প্রধান রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ এবং শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকায় একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।খুলনায় পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে চলছে জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আটক করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের ১৪ নেতাকর্মীকে।এছাড়া, পুলিশ কুমিল্লায় ১০, যশোরে ১০, বরিশালে ১৭, গাজীপুরে ২, কুষ্টিয়া ৪, ভোলায় ২, রাজবাড়িতে ৩, দিনাজপুরে ১৬, নোয়াখালীতে ৪, হবিগঞ্জে ৬, চট্টগ্রামে ৬, সিরাজগঞ্জে ১, কক্সবাজারে ৫ ও মৌলভিবাজারে ১ জনকে আটক করেছে।
জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি প্রদান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, সারাদেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি প্রদান, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের দাবিতে এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সরকারের দুঃশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি ও ইসলামী মূল্যবোধের ওপর আঘাতের প্রতিবাদে গতকাল এক বিবৃতিতে দলটি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।#