সীমান্ত এলাকার অসাধু গরু ব্যবসায়ীদের অর্থের লোভের কারণে একের পর এক বিএসএফের গুলিতে জীবন দিতে হচ্ছে সীমান্ত এলাকার যুবকদের।
গত ৩ বছরে ভারতের তার কাটার বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে প্রায় ৫০জনকে। বিএসএফের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে মিন্টু মন্ডলের মত অনেক যুবককে।
তবে বরাবরের মত শ্যামকুড় ইউনিয়নের লড়াই ঘাট সীমান্ত এলাকার গরু ব্যবসায়ী রহিম মেম্বর, হারুণ, বুদ্ধসহ কয়েকজন এলাকার সহজ সরল যুবকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে ভারতে গরু আনতে পাঠালে বিএসএফ সদস্যরা তাদেরকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে। বিএসএফের গুলিতে নিহত এলাকার যুবকদের হত্যা করার পর গরু ব্যবসায়ীরা তাদের সংসারের কোন খোঁজ খবর রাখে না ।
সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানাগেছে, শ্যামকুড় ইউনিয়নের লড়াই ঘাট গ্রামের ২০১০ সালের প্রথম দিকে ভারতের ফতেপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা লড়াই ঘাট গ্রামের আব্দুল কাদেরের পুত্র জামাল (২৮) ভোর রাতে চাঁপাতলা সীমান্ত দিয়ে গরু আনতে গেলে গুলি করে হত্যা করে। একই গ্রামের রশিদ ঢালীর পুত্র শাহাজামাল (৩০) মাঠপাড়া সীমান্ত দিয়ে গরু আনতে গেলে বিএসএফ সদস্যরা গুলি ও নির্যাতন করে হত্যা করে, রবিউল ইসলামের পুত্র পুত্র জামাল (২৮) ও একই গ্রামের আব্দুল কাদেরের পুত্র আমানউল্লাহ (২৫) লড়াই ঘাট সীমান্ত দিয়ে এলাকার গরু ব্যবসায়ী চোরাকারবারী রহিম মেম্বারের গরু আনতে যাওয়ার সময় ভারতের ফতেপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়।
২০১০ সালের ২১ জন ভোর রাতে শ্যামকুড় হঠাৎ পাড়া গ্রামের আক্কাশ আলীর পুত্র বাহার আলী (২২) শ্রীনাথপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গরু আনতে গেলে ভারতের ফতেপুর ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে, ২০১১ সালের ১৭ ইং জুন ভোর রাতে চাঁপাতলা সীমান্ত দিয়ে ভারতে গরু আনতে যাওয়ার সময় ভারতের ফতেপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা কাটা তারের বেড়ার মধ্যে গুলি করে হত্যা করে চাঁপাতলা গ্রামের আব্দুস সাত্তার মন্ডলের পুত্র মিরাজুল ইসলাম (২৮)কে, ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ভোর রাতে মাঠিলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের তার কাটার বেড়া কেটে গরু পার করার সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বিএসএফের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে নিজাম মাস্টারের পুত্র জাহিদুল ইসলাম লাল্টু (৩৮)কে। এসময় তার সাথে থাকা যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ধানবুনি গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র শাহিন (২৫) বিএসএফের গুলিতে আহত হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর ভোর রাতে শ্যামকুড় মাঠপাড়া গ্রামের তোরাব হোসেনের পুত্র রবিউল ইসলাম (৩৫) শ্রীনাথপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের তারকাটার বেড়া কেটে ভারতে গরু আনতে গেলে ভারতের ফতেপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা নির্মমভাবে গুলি ও নির্যাতন করে হত্যা করে। এসময় আহত হয় আব্দুল্লাহ (২৪), ইমরান (২৫), মোহাম্মদ (২৫), শক্তি হালদার (২৫), রাজু (২৩)।
বিএসএফের গুলিতে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে শ্যামকুড় বৌউ বাজার এলাকার নিয়ামত মন্ডলের পুত্র মিন্টু (২২) কে।
শ্যামকুড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দীন খান জানান, এলাকার সাধারণ যুবকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে অসাধু গরু ব্যবসায়ীরা এলাকার সাধারণ যুবকদের জীবন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
বিএসএফের গুলিতে নিহত জামালের স্ত্রী হামিদা জানান, আমার স্বামী মরে যাওয়ার পর কোন ব্যবসায়ী এক নজর দেখতেও আসেনি। বাহার আলীর পিতা আক্কাচ আলী জানান, যে রহিম মেম্বারের গরু আনতে গিয়ে আমার একমাত্র ছেলেকে বিএসএফরা গুলি করে হত্যা করেছে,সেই গরু ব্যবসায়ী আমার সংসারের কোন খোঁজ রাখেনা ।
বিজিবির যাদবপুর কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার শের-ই আলম জানান, তাদের কাছে বিএসএফের গুলিতে নিহতদের কোন তালিকা আছে কিনা তা তার জানা নেই কারণ তিনি নতুন এসেছেন।
৩৫ ব্যাটিলিয়ানের কুশুমপুর কোম্পানী কমান্ডার আমির খসরু জানান, আমাদের সীমান্ত এলাকার কিছু গরু ব্যবসায়ী রাতের অন্ধকারে ভারত সীমান্তের তার কাটার বেড়া কেটে গরু আনার সময় এই হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে থাকে।
তিনি আরও জনানা, গত ১৮ অক্টোবর শ্রীনাথপুর সীমান্তের ৬১ নং পিলারের নিকট বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকে ভারতের ফতেপুর বিএসএফের কোম্পানী কমান্ডার বিবেক চৌহান অভিযোগ করেন বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীরা ভারতের তার কাটার বেড়া কেটে গরু আনতে যাওয়ার সময় তাদেরকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বিএসএফের নিষেধের বিপরীতে গরু ব্যবসায়ীরা বিএসএফের সদস্যদেরকে ইট পাটকেল লাঠি সোটা নিয়ে ধাওয়া করলে তখন বাধ্য হয় বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালিয়ে থাকে।