ডেস্ক রিপোর্টঃ
গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষনে সৃষ্ট দুর্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগে বুধবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় প্রেস বিঞ্জপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ।এ ছাড়া
মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সেনাবাহিনীর একটি দল দুর্যোগপূর্ণ ওই সব এলাকায় উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে ।
খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে দুর্গতদের সহায়তায় নগদ এক কোটি টাকা ও এক হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) পরামর্শক মাসুদ কামাল জানান, পাহাড়ধসের কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষজ্ঞ দল শিগগিরই রওনা হচ্ছে।
বান্দরবানের স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, জেলার লামা উপজেলায় আজ সকাল পর্যন্ত ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই পাহাড় ধসে নিহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, আরও অনেকে ধসে পড়া পাহাড়ের মাটির নিচে চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের ৩০ কিলোমিটার দূরে বাইশারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুল হক বলেন, দক্ষিণ বাইশরি গ্রামে গতকাল রাতে পাহাড়ি ঢলে এক পরিবারের ছয়জনসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিবারের নিহতরা হলেন রুহুল আমিন (৪২), তাঁর স্ত্রী সালেহা বেগম (৩২), ছেলে শফিউল আলম (৭) ও মোরশেদুল ইসলাম (৩), মেয়ে পারভীন আক্তার (৫), শ্বাশুড়ি হাসিনা বেগম (৭০)। আজ সকালে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন লাশগুলো উদ্ধার করে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, সদর ইউনিয়নের বাগানগোনা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনায় দুজন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালি গ্রামের সোলায়মান (৩০) এবং অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৫০০ ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে এবং তিন থেকে পাঁচ হাজার বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার দুই তলা স্কুল-কলেজগুলো দুর্গতদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
উখিয়ায় নিহত ১০: উখিয়ায় হলদিয়াপালং ও রত্নাপালং ইউনিয়নে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পৃথক পাহাড় ধসে বসতঘরের মাটির নিচে চাপা পড়ে ১০ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের লাশ উদ্ধার করেছেন।
উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন মিন্টু জানান, গতকাল রাত একটার দিকে ইউনিয়নের পাতাবাড়ি বরইতলী গ্রামে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে একই পরিবারের চারজনসহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়।
রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল কবীর চৌধুরী বলেন, রাত দেড়টার দিকে ইউনিয়নের ভালুকিয়া বিজিবি-ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারকুপ ইউনিয়নে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে একই পরিবারের চারজনসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকাল সাতটার দিকে রামু উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, হাটহাজারীতে দেয়াল চাপায় দুজন, বাঁশখালীতে পাহাড় ধসে তিনজন, নগরের আকবর শাহ মাজার এলাকায় পাহাড় ধসে তিনজন, বিশ্বকলোনিতে পাহাড় ধসে পাঁচজন, উত্তর পাহাড়তলীতে পাহাড় ধসে দুজন এবং আমবাগানে দেয়াল চাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়।
সীতাকুন্ডু সংবাদদাতা জানান, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সেলিমপুরে পাহাড়ধসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে ।
গত বৃহস্পতিবার থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। গত রাতে ঢাকা ও সিলেটের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়।